পরিবেশ ও বিজ্ঞান
সপ্তম শ্রেণি
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
WEST BENGAL BOARD OF SECONDARY EDUCATION
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
প্রথম সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০১৩
দ্বিতীয় সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০১৪
তৃতীয় সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০১৫
চতুর্থ সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০১৬
পঞ্চম সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০১৭
গ্রন্থস্বত্ব: পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
প্রকাশক:
অধ্যাপিকা নবনীতা চ্যাটার্জি
সচিব, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
77/2 পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা-700 016
মুদ্রক:
ওয়েস্ট বেঙ্গল টেক্সটবুক কর্পোরেশন
(পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগ)
কলকাতা-৭০০ ০৫৬
ভারতের সংবিধান
প্রস্তাবনা
আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে:
- সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার;
- চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে;
আমাদের গণপরিষদে, আজ, 1949 সালের 26 নভেম্বর, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
THE CONSTITUTION OF INDIA
PREAMBLE
WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens: JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship; EQUALITY of status and of opportunity and to promote among them all FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this twenty-sixth day of November 1949, do HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.
ভূমিকা
জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ এবং শিক্ষা অধিকার আইন ২০০৯ দলিল দুটিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক গঠিত 'বিশেষজ্ঞ কমিটি'-কে বিদ্যালয় স্তরের পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তকগুলির সমীক্ষা ও পুনর্বিবেচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই কমিটির বিষয়-বিশেষজ্ঞদের আন্তরিক চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল হলো এই বইটি। এই বিজ্ঞান বইটি সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে ও নামকরণ করা হয়েছে 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান'। অতীব সহজ সরল ভাষায় বইটিতে পরিবেশ, ভৌত ও জীবনবিজ্ঞানের বিভিন্ন অভিমুখ আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবি, প্রতিকৃতি, চিত্রের নকশা ব্যবহার করে পরিবেশ ও বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতে তথ্য ভারাক্রান্ত না হতে হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। লেখা ও ছবিগুলি যাতে শিশুমনে আকর্ষণীয় হয় সেদিকে নজর রেখে উৎকৃষ্ট মানের কাগজ, কালি ও রং ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি পর্যদ প্রণীত 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান' বইটি শিক্ষার্থীদের কাছে সমাদৃত হবে ও তাদের শিখন সামর্থ্য বাড়বে। অন্যদিকে সক্রিয়তা-নির্ভর অনুশীলনীর মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ে আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রথিতযশা শিক্ষক - শিক্ষিকা, শিক্ষাপ্রেমী শিক্ষাবিদ, বিষয়-বিশেষজ্ঞ ও অলংকরণের জন্য বিখ্যাত শিল্পীবৃন্দ - যাঁদের ঐকান্তিক চেষ্টায় ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে এই সর্বাঙ্গসুন্দর গুরুত্বপূর্ণ বইটির প্রকাশ সম্ভব হয়েছে তাঁদের সকলকে পর্ষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশনের সহায়তায় বইটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এই প্রকল্পকে কার্যকরী করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা অধিকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন সাহায্য করে পর্ষদকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে তা স্বীকার না করলে অন্যায় হবে। আশা করি পর্যদ প্রকাশিত এই 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান' বইটি শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞানের বিষয়গুলি আকর্ষণীয় করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানচর্চার মান উন্নততর করতে সহায়ক হবে। ছাত্রছাত্রীরা উদবুদ্ধ হবে। এইভাবে সার্থক হবে পর্ষদের সামাজিক দায়বদ্ধতা।
সমস্ত শিক্ষাপ্রেমী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ তাঁরা যেন বিনা দ্বিধায় বইটির ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্ষদের নজরে আনেন যাতে করে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যায়। এতে বইটির মান উন্নত হবে এবং ছাত্রসমাজ উপকৃত হবে। ইংরেজিতে একটি আপ্তবাক্য আছে যে, 'even the best can be bettered'। বইটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষক সমাজের ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের গঠনমূলক মতামত ও সুপরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে।
ডিসেম্বর, ২০১৭
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
৭৭/২, পার্ক স্ট্রিট
কলকাতা-৭০০০১৬
কল্যাঈময় গঙ্গোপাধ্যায়
সভাপতি
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
প্রাক্কথন
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি 'বিশেষজ্ঞ কমিটি' গঠন করেন। এই বিশেষজ্ঞ কমিটির ওপর দায়িত্ব ছিল বিদ্যালয় স্তরের সমস্ত পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক- এর পর্যালোচনা, পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নতুন পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যপুস্তক নির্মিত হলো। পুরো প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ এবং শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ (RTE Act, 2009) নথিদুটিকে আমরা অনুসরণ করেছি। পাশাপাশি সমগ্র পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে আমরা গ্রহণ করেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শের রূপরেখাকে।
উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞান বইয়ের নাম 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান'। জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা (২০০৫) অনুযায়ী জীবনবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান ও পরিবেশ সমন্বিত আকারে একটি বইয়ের মাধ্যমে পরিবেশিত হলো। সহজ ভাষায় এবং উপযুক্ত দৃষ্টান্তের সহযোগে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বুনিয়াদি ধারণা শিক্ষার্থীদের সামনে আমরা উপস্থাপিত করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন চিত্র সংযোজন করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীর কাছে বইটি আকর্ষণীয় এবং প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানগ্রন্থ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি আমরা স্মরণে রেখেছি- 'তাহার ভাষা ও বিষয়বিন্যাস যতদূর সম্ভব সহজ করা উচিত, নতুবা ছাত্রদিগের মানসিক শক্তির অন্যায় এবং নির্দয় অপব্যয় সাধন করা হয়।' (ছাত্রবৃত্তির পাঠ্যপুস্তক)। ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম 'বিজ্ঞান' আলাদা বিষয় হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে বিন্যস্ত হয়েছে। এই পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশে আর বিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ক সন্ধানে ব্রতী হবে এবং উৎসাহ নিয়ে বিজ্ঞানকে জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে পড়বে, এই আমাদের প্রত্যাশা।
নির্বাচিত শিক্ষাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিষয়-বিশেষজ্ঞবৃন্দ অল্প সময়ের মধ্যে বইটি প্রস্তুত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষার সারস্বত নিয়ামক পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পাঠ্যপুস্তকটিকে অনুমোদন করে আমাদের বাধিত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা অধিকার প্রভূত সহায়তা প্রদান করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ।
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চ্যাটার্জী প্রয়োজনীয় মতামত এবং পরামর্শ দিয়ে আমাদের বাধিত করেছেন। তাঁকে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। বইটির উৎকর্ষবৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রেমী মানুষের মতামত, পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করব।
ডিসেম্বর, ২০১৭
নিবেদিতা ভবন
পঞ্চমতল
বিধাননগর, কলকাতা: ৭০০০৯১
অভীক মজুমদার
চেয়ারম্যান
'বিশেষজ্ঞ কমিটি'
বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
বিশেষজ্ঞ কমিটি পরিচালিত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্ষদ
পুস্তক নির্মাণ ও বিন্যাস
- অধ্যাপক অভীক মজুমদার (চেয়ারম্যান, বিশেষজ্ঞ কমিটি)
- অধ্যাপক রথীন্দ্রনাথ দে (সদস্যসচিব, বিশেষজ্ঞ কমিটি)
- ড.সন্দীপ রায়
- দেবব্রত মজুমদার
- পার্থপ্রতিম রায়
- ড.শ্যামল চক্রবর্তী
- সুদীপ্ত চৌধুরী
- রুদ্রনীল ঘোষ
- নীলাঞ্জন দাস
- ড.ধীমান বসু
- বিশ্বজিৎ বিশ্বাস
- দেবাশিস মন্ডল
- অধ্যাপক অমূল্যভূষণ গুপ্ত
- ড. অনির্বাণ রায়
পরামর্শ ও সহায়তা
- ড. শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য
- ডাঃ সুব্রত গোস্বামী
- ডাঃ অমিতাভ চক্রবর্তী
- ডাঃ পৃথ্বীশ কুমার ভৌমিক
- অধ্যাপক মণীন্দ্রনাথ মজুমদার
- অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মজুমদার
- শিবপ্রসাদ নিয়োগী
- ডঃ অংশুমান বিশ্বাস
পুস্তক সজ্জা
- দেবাশিস রায়
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ
- সহায়তা - হিরাব্রত ঘোষ, অনুপম দত্ত, বিপ্লব মন্ডল
সূচিপত্র
বিষয় | পৃষ্ঠা |
---|---|
1. ভৌত পরিবেশ | |
(i) তাপ | 1-14 |
(ii) আলো | 15-37 |
(iii) চুম্বক | 38-48 |
(iv) তড়িৎ | 49-62 |
(v) পরিবেশবান্ধব শক্তি | 63-69 |
2. সময় ও গতি | 70-84 |
3. পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া | 85-100 |
4. পরিবেশ গঠনে পদার্থের ভূমিকা | 101-144 |
5. মানুষের খাদ্য | 145-181 |
6. পরিবেশের সজীব উপাদানের গঠনগত বৈচিত্র্য ও কার্যগত প্রক্রিয়া | 182-226 |
7. পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ | 227-255 |
8. পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য | 256-307 |
পাঠ্যসূচি ও নমুনা প্রশ্ন | 308-315 |
শিখন পরামর্শ | 316-317 |
'পরিবেশ ও বিজ্ঞান' বই নিয়ে কিছু কথা
এই বইয়ের নাম কেন 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান' সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের মনে হয়েছে যে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের প্রথমে পরিবেশের নানান ঘটনা ও বৈচিত্র্যের প্রতি কৌতূহলী ও অনুসন্ধিৎসু করে তোলা প্রয়োজন। বিজ্ঞানের দিকে শিশুর যাত্রা তার চেনা পৃথিবী থেকে, যেখানে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতাই সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। সেই কারণে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের নাম 'আমাদের পরিবেশ'। পরিবেশ পর্যবেক্ষণ থেকে মানুষ যখন ধীরে ধীরে আরো জানতে চায় তখন সে অনুভব করে যে শুধু পরিবেশ পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট নয়। সেকাজে তখন প্রয়োজন বিজ্ঞানের, যে বিজ্ঞান তার জ্ঞানের যাত্রায় আলোকবর্তিকা। এই কারণেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বইয়ের নাম 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান'।
আমরা ছাত্রছাত্রীকে বিজ্ঞানের প্রথাগত (Formal) ধারণায় দীক্ষিত করতে চাই, কিন্তু সে যাত্রায় আমরা অনুসরণ করব শিখনের Constructivist ধারণার পথই। আজ সারা বিশ্বে পঠনপাঠনে অনুসৃত এই Constructivist ধারণার মূল কথা হলো শিক্ষার্থীকে তার পরিচিত জগৎ থেকে তার মনোজগতের ধারণাসমূহের সাহায্য নিয়ে ও পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষায় দীক্ষিত করা। সেই কারণে যতদূর সম্ভব নানাভাবে অনুসন্ধানের (Exploration) সাহায্য নেওয়া হয়েছে, বহুসংখ্যক হাতেকলমে পরীক্ষার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সবপরীক্ষা অল্প চেষ্টায়, অল্প খরচেই করা সম্ভব। হাতেকলমে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের নানান বিষয় আরো ভালোভাবে শিখতে পারবে। যেহেতু বিজ্ঞানের সবকিছুই Intuitive নয়, তাই শিক্ষক/ শিক্ষিকাকে Concept Learning ও Knowledge Construction-এর বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিখন পরিচালনা করতে হবে। এই বইটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সমন্বয়ী প্রচেষ্টার (Integrated Approach) ফসল। আমরা মনে করি দুটি প্রচ্ছদের মধ্যে জীববিদ্যা, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও পরিবেশ অন্তর্ভুক্ত করলেই সমন্বয় সাধন হয়ে যায় না। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সম্পর্ক স্থাপন এবং মেলবন্ধনের চেষ্টাই এই বইকে অন্য মাত্রা দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। 'পরিবেশ ও বিজ্ঞান' বইটিতে সহজ ভাষায় জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার মেলবন্ধনের চেষ্টা করা হয়েছে, সেই দিক থেকে দেখলে এই বইটি পথিকৃৎ।
বিজ্ঞানে তথ্যানুসন্ধান ও সংগৃহীত তথ্যের যথাযথ লিপিবদ্ধকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের এই বইয়ের পাঠক ও পাঠিকাদের বহুক্ষেত্রেই Open-ended প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই ধরনের প্রশ্ন / কর্মপত্র ছাত্রছাত্রীদের অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি ও পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগৎ থেকে জ্ঞান আহরণে উৎসাহী করে তুলতে সংযোজিত হয়েছে। এটিও এই বইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বইটি সম্বন্ধে যে-কোনো গঠনমূলক পরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে।
1
ভৌত পরিবেশ
তাপ
ঠান্ডা ও গরমের ধারণা
ওপরের ছবিতে তিনটি বাটির একটিতে ঠান্ডা জল আর অন্য দুটিতে ভিন্ন মাত্রার গরম জল আছে। আঙুল ডুবিয়ে যদি তিনটি পাত্রের জলের গরম অবস্থার বর্ণনা দিতে চাও তাহলে কীভাবে ওই অবস্থার বর্ণনা করবে? উত্তরটা হয় 'ঠান্ডা' অথবা 'গরম' অথবা 'বেশি গরম'।
কিন্তু যদি বিভিন্ন মাত্রার গরম জলের অনেকগুলো পাত্র নেওয়া হয়, একই ধরনের শব্দ দিয়ে তাদের গরম বা ঠান্ডা অবস্থাকে আলাদা করে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। অথচ আমরা চাই যে নানারকমের ঠান্ডা-গরম অবস্থার বর্ণনা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের থাকুক। যখন শব্দ দিয়ে এটা হচ্ছে না, এমন কিছু কি তোমার মনে আসছে যা দিয়ে এটা সম্ভব? নানারকমের টাকার হিসাব আমরা সংখ্যা দিয়ে করি। নানারকম ওজন আমরা সংখ্যা দিয়ে বোঝাই, এখানেও কি ওইভাবে সংখ্যা ব্যবহার করা সম্ভব? বিভিন্ন ঠান্ডা-গরম অবস্থা প্রকাশের জন্যও তাই বিভিন্ন সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। এখন প্রশ্ন, কতটা ঠান্ডা বা কতটা গরমের জন্য কোন সংখ্যা, তা ঠিক হবে কীভাবে? চলো নীচের পরীক্ষাটি থেকে এই প্রশ্নের উত্তর আন্দাজ করা যাক।
উষ্ণতা ও তার পরিমাপ:
উপকরণ:
- 1) ঢাকনাওয়ালা একটি ছোটো কাচের শিশি।
- 2) কিছুটা রঙিন জল।
- 3) পেনের সরু খালি রিফিল।
- 4) এক বাটি গরম জল।
পদ্ধতি:
খালি শিশিতে কিছুটা রঙিন জল নাও। জলের পরিমাণ এমন হবে যাতে শিশির মধ্যে বায়ুপূর্ণ স্থানের পরিমাণ বেশি হয়। ওই শিশির মুখটা ভালো করে আটকাও। শিশির ছিপিতে ডট পেনের দু-মুখ খোলা ফাঁকা সরু রিফিলের নলটা ঢোকাবার মতো একটা ফুটো করো। ওই ফুটো দিয়ে ওই ফাঁকা রিফিল ঢোকাও। মুখে মাখার ক্রীম বোতল আর রিফিলের জোড়ের মুখে লাগাও। শিশিটাকে কিছুক্ষণ বাটির গরম জলের মধ্যে এমন ভাবে ডুবিয়ে রাখো যাতে শিশির বায়ুপূর্ণ স্থানের
বেশিরভাগটা জলের তলায় থাকে। কী দেখলে? রিফিলের নল দিয়ে রঙিন জল কি কিছুটা উপরে উঠল? জল যতটা উঠল সেখানে নলের গায়ে একটা দাগ দাও।
এবার বাটির জলটা আরও একটু বেশি গরম করে পরীক্ষাটা আবার করো। দেখত এবার রঙিন জল রিফিলের নল দিয়ে বেশি উচ্চতায় উঠল কিনা। জল যতদূর উঠল সেখানে নলের গায়ে আবার দাগ দাও। তোমার জ্যামিতি বাক্সের স্কেল দিয়ে সহজেই তুমি দাগ অবধি রঙিন জলের উচ্চতা মাপতে পারো। যার ফলে তুমি দুটি আলাদা সংখ্যা পাবে যা দৈর্ঘ্যের মান বোঝায়। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ এই দুরকম দৈর্ঘ্যের জন্য দুটি আলাদা সংখ্যা পাওয়ার কারণ কী। বাটির জল দু-বার দু-রকম গরম ছিল। তাই রঙিন জল দু-বার দু-রকম উচ্চতায় উঠেছে। আমরা দুরকম গরমের জন্য দুটি আলাদা সংখ্যা পেয়েছি। এইভাবে বিভিন্ন গরম-ঠান্ডা অবস্থার জন্য সংখ্যা ঠিক করতে অপর একটি রাশির (যেমন- এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য) সাহায্য নেওয়া হয়।
তোমরা বাড়িতে জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার দেখেছ। জ্বর বাড়লে ওই থার্মোমিটারের মধ্যে সরু সুতোর মতো পারদসূত্রের দৈর্ঘ্য বাড়ে। তবে থার্মোমিটারের গায়ে লেখা সংখ্যাটি কিন্তু দৈর্ঘ্যের মাপ নয়। পারদসূত্রের দৈর্ঘ্য যেভাবে বাড়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই থার্মোমিটারের গায়ের সংখ্যাগুলি ঠিক করা হয়েছে। গরম বা ঠান্ডা অবস্থা প্রকাশের জন্য এভাবে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তাকে আমরা বলি উষ্ণতার পরিমাপ। উষ্ণতা মাপার জন্য থার্মোমিটার তৈরি করা হয়। বিভিন্নরকম গরমের সংস্পর্শে পারদসূত্র যখন বিভিন্ন উচ্চতায় ওঠে তখন তা বিভিন্ন উষ্ণতা বোঝায়।
নীচের ছবিদুটি লক্ষ করো।
ছবি :1
ছবি :2
দুটি থার্মোমিটার একই রকম। দুটি ছবিতেই থার্মোমিটার দুটি একই তরলের মধ্যে ডোবানো আছে। 1 নং ছবিতে থার্মোমিটার দুটির পারদসূত্রের উচ্চতা সঠিকভাবে দেখানো হয়েছে কি? যুক্তি দিয়ে লেখো। 2 নং ছবিতে থার্মোমিটার দুটির পারদসূত্রের উচ্চতা কি সঠিক দেখানো আছে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ক
খ
পাশের ছবিতে হুবহু একই ধরনের গঠনের থার্মোমিটার 'ক' ও 'খ' দেখানো হয়েছে। দুটি থার্মোমিটারেরই পারদকুন্ড একটি পাত্রে রাখা বরফের মধ্যে ডোবানো আছে। এই অবস্থায় থার্মোমিটার দুটির পারদসূত্র যে উচ্চতায় উঠেছে সেখানে দাগ কাটা হয়েছে। ছবিতে ওই দুটি দাগের পাশে নিজের ইচ্ছে মতো দুটি আলাদা সংখ্যা বসাও।
ভৌত পরিবেশ
ক
খ
দুটি আলাদা পাত্রে তরল নেওয়া হলো। পাশের ছবিটিতে থার্মোমিটারের পারদসূত্রের উচ্চতা দেখে বলো কোন পাত্রের তরলের উষ্ণতা বেশি 'ক' না 'খ'?
ক
খ
পাশের ছবিতে পাত্রের জলটা ফুটছে। ফুটন্ত জলের একটু উপরে উপরোক্ত থার্মোমিটার দুটির পারদকুণ্ড রাখলে পারদসূত্রের উচ্চতা বাড়তে বাড়তে একসময় স্থির হয়। থার্মোমিটারের যে উচ্চতায় পারদসূত্র উঠবে সেখানে একটা দাগ দেওয়া হয়। ওই দাগটা ওই গরমের মাত্রায় পারদসূত্রের উচ্চতা কতটা তাকে দেখায়। ছবিতে 'ক' ও 'খ' থার্মোমিটারে যে দুটি দাগ দেওয়া আছে তার পাশে নিজের ইচ্ছে মতো দুটি আলাদা সংখ্যা লেখো, যে সংখ্যা দুটি আগের ছবিতে বরফে ডোবানো থার্মোমিটারের গায়ে লেখা সংখ্যা দুটির চাইতে বেশি।
4
নীচে সঠিক স্থানে তোমার ভাবা সংখ্যাগুলো লেখো।
পারদসূত্র যেখানে উঠেছে | ক-থার্মোমিটার | খ-থার্মোমিটার |
---|---|---|
গরম বাষ্পে রাখার পর (U) | ||
বরফে ডোবানোর পর (L) | ||
U-L (বিয়োগফল) | ||
দুটি দাগের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে কত ভাগে ভাগ করলে একটি ভাগকে 'এক' বলা যাবে? এই একটি ভাগকে এক ডিগ্রি বলা হয়। |
পাশের ছবিটি ভালো করে দেখো
'ক' ও 'খ' দুটি থার্মোমিটারই একরকম। একই জিনিস দিয়ে তৈরি। একটি পাত্রে বরফ ও বরফ-গলে-পাওয়া জল একসঙ্গে আছে। জল ও বরফের ওই মিশ্রণের মধ্যে দুটি থার্মোমিটারের পারদকুন্ড ছবির মতো করে ডোবানো হলো। নীচের সারণিটি ভালো করে দেখো ও পারদসূত্র যে উচ্চতায় উঠেছে তার গায়ে লেখা সংখ্যা দুটি লক্ষ করো।
ক | খ | ||
---|---|---|---|
পারদ স্তম্ভের উচ্চতা | ক ও খ-তে একই | ||
পারদসূত্র যে উচ্চতায় রয়েছে সেখানে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশিত গরমের মাত্রা (L) | 0° | 32° |
পাশের চিত্রে 'ক' ও 'খ' দুটি থার্মোমিটারই একরকম। দুটি থার্মোমিটারেরই কুণ্ডকে একই পাত্রে রাখা ফুটন্ত জলের ওপরের বাষ্পে রাখা হলো। পারদসূত্র যেখানে উঠল সেখানে সংখ্যা লিখে গরমের মাত্রা বোঝানো হয়েছে।
নীচের সারণিটি দেখো ও সংখ্যাদুটি লক্ষ করো।
ভৌত পরিবেশ
ক | খ | |
---|---|---|
পারদ স্তম্ভের উচ্চতা | কও খ-তে একই | |
সংখ্যা দিয়ে প্রকাশিত বেশি গরমের মাত্রা (U) | 100° | 212° |
সারণি 1 ও সারণি 2 মিলিয়ে লেখো:-
ক | খ | |
---|---|---|
বরফ জলে ডোবানোর পর লেখা সংখ্যা (L) | ||
ফুটন্ত জলের উপরে রাখার পর লেখা সংখ্যা (U) | ||
U-L | ||
দুটি দাগের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে কয় ভাগে ভাগ করলে একটি ভাগকে এক ডিগ্রি বলা যাবে? |
উপরে নেওয়া 'ক' থার্মোমিটারকে যেভাবে সংখ্যা লিখে ভাগ করা হয়েছে তাকে বলে সেলসিয়াস স্কেল, আর 'খ' থার্মোমিটারকে যেভাবে ভাগ করা হয়েছে তাকে বলে ফারেনহাইট স্কেল। সেলসিয়াসকে C ও ফারেনহাইটকে F দিয়ে বোঝানো হয়।
রেখা দিয়ে বোঝানো সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট থার্মোমিটারের স্কেলের ছবি পাশে দেওয়া হলো।
ধরা যাক, একটি নির্দিষ্ট বস্তুর উষ্ণতা সেলসিয়াস স্কেলে 'C' ও ফারেনহাইট স্কেলে 'F' পাঠ দেখাচ্ছে। সেলসিয়াস স্কেলে 0° থেকে C-এর দূরত্ব এবং ফারেনহাইট স্কেলে 32° থেকে F-এর দূরত্ব সমান। এবার বলত, 0° থেকে C-এর মধ্যে কতগুলি ঘর আছে, এবং 32° থেকে F-এর মধ্যে কতগুলি ঘর আছে?
আগেই দেখেছ সেলসিয়াস স্কেলের 100 ঘর সবসময় ফারেনহাইট স্কেলের 180 ঘরের সমান। তাহলে সেলসিয়াস স্কেলের 1 সংখ্যক ঘর সবসময় ফারেনহাইট স্কেলের $\frac{180}{100}$ ঘরের সমান। অতএব, সেলসিয়াস স্কেলের C সংখ্যক ঘর সবসময় ফারেনহাইট স্কেলের $\frac{180C}{100}$ সংখ্যক ঘরের সমান।
তাহলে লেখা যায়, $\frac{180C}{100}=F-32$ বা, $\frac{9C}{5}=F-32$ বা, $\frac{C}{5}=\frac{F-32}{9}$
আবার, $\frac{9C}{5}=F-32$ বা, $C=\frac{5}{9}(F-32)$ হলে
এবার $40^{\circ}C$ কত ডিগ্রি ফারেনহাইটের সমান তা কষে বের করো।
উষ্ণতার পরিবর্তন ও তাপের ধারণা:
শীতকালে ঠান্ডা জলের সঙ্গে গরম জল মিশিয়ে আমরা অনেকেই স্নান করি। এসো দেখি তা থেকে আমরা কি নতুন বিষয় শিখতে পারি।
ভৌত পরিবেশ
নীচের ছবিদুটি লক্ষ করো
বালতিতে 15°C উষ্ণতায় জল
গামলাতে 97°C উষ্ণতায় জল
এবার বলো, বালতির জল ও গামলার জল মিশিয়ে দিলে কী হবে? ঠিক উত্তরের পাশে' $\sqrt{}$ দাও
- মেশানো জল গামলার জলের চাইতে কম গরম
- মেশানো জল বালতির জলের চাইতে বেশি গরম
তুমি দেখতে পেলে যে দুটি আলাদা উষ্ণতার বস্তু সংস্পর্শে এলে একটির উষ্ণতা বাড়ে ও অন্যটির উষ্ণতা কমে। এখন প্রশ্ন এটা কেন হয়?
যে বস্তুটির উষ্ণতা বাড়ল ভাবা যেতে পারে যে সে বাড়তি কিছু পেল। একইভাবে যার উষ্ণতা কমল সে কিছু হারাল।
দুটি ভিন্ন উষ্ণতার বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে এলে যা হারায় বা যা বাড়তি পায় তাকেই আমরা বলি তাপ (Heat)। তাহলে যখন কোনো বস্তুর উষ্ণতা বাড়েও না বা কমেও না, স্থির থাকে অর্থাৎ বস্তুটি কিছু বাড়তি পায়ও না বা হারায়ও না তখন তাপের কথা ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। ওপরের পরীক্ষায় গরম ও ঠান্ডা জলের উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটলেও জল তরলই ছিল, তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু পরে আমরা দেখবো যে কোনো পদার্থের যখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটে (পদার্থটি কঠিন থেকে তরল হয়, বা তরল থেকে বাষ্প হয়, বা বাষ্প থেকে তরল হয় ইত্যাদি) তখন তাপ গ্রহণ বা বর্জন করা সত্ত্বেও ওই পদার্থটির উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন হয় না।
8
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাপ
দুটি হুবহু একই রকম পাত্র নেওয়া হলো। পাত্রদুটিতে ঘরের উষ্ণতায় (ধরি, 25°C) সমান পরিমাণে জল নেওয়া হলো। একই বার্নার দিয়ে পাত্রদুটির জলকে পরপর গরম করা হলো। ধরো, প্রথম পাত্রের জলকে 50°C পর্যন্ত ও দ্বিতীয় পাত্রের জলকে 75°C পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হলো। (শূন্যস্থান পূরণ করো এবং উপযুক্ত স্থানে' $\sqrt{}$ দাও।)
50°C
75°C
দ্বিতীয় পাত্রের জলের উষ্ণতা কতটা বাড়ানো হলো? ______°C
কোন পাত্রের জলকে উত্তপ্ত করতে বেশি তাপ দিতে হয়েছে বলে তোমার মনে হয়? (সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও)
- প্রথম পাত্রের জল
- দ্বিতীয় পাত্রের জল
এখন 50°C ও 75°C উষ্ণতার জল সহ পাত্র দুটোকে ঘরের উষ্ণতায় (25°C) রেখে দেওয়া হলো। তাহলে ওই দুই পাত্রের জলই আলাদা আলাদা করে তাপ হারিয়ে কোনো না কোনো সময়ে ঘরের উষ্ণতায় আসবে। অর্থাৎ প্রথম পাত্রের জলের উষ্ণতা কমবে (50-25)°C = 25°C আর দ্বিতীয় পাত্রের জলের উষ্ণতা কমবে (75-25)° = 50°C
ভেবে বলো তো কোন পাত্রের জল বেশি তাপ হারিয়েছে?
তাহলে বলা যায়-
নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তু বাইরে থেকে কতটা তাপ নিয়েছে বা কতটা তাপ ওই বস্তু থেকে বাইরে বেরিয়ে গেছে সেটা নির্ভর করে ওই বস্তুর উষ্ণতা আগের থেকে কতটা বাড়ল বা কমল তার উপর। উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ যদি দ্বিগুণ হয় তবে বস্তুর নেওয়া তাপের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে। একটি বস্তুর উষ্ণতা 10°C থেকে 20°C করতে যতটা তাপ দরকার 20°C থেকে 40°C করতে তার দ্বিগুণ তাপ দরকার।
ভৌত পরিবেশ
বস্তু বাইরে থেকে যতটা তাপ নেয় বা বাইরে যতটা তাপ ছেড়ে দেয় তার সঙ্গে বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা উষ্ণতা হ্রাসের সরল সম্পর্ক রয়েছে। একটা পাত্রে একগ্লাস জল নেওয়া হলো। জলের উষ্ণতা 25°C। একটি বার্নার দিয়ে ওই জলকে 50°C পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হলো। এবার ওই পাত্র খালি করে তাতে কুড়ি গ্লাস জল নেওয়া হলো। জলের উষ্ণতা এবারেও 25°C। ওই বার্নার দিয়ে এই জলের উষ্ণতা বাড়িয়ে আবার 50°C করা হলো।
25°C উষ্ণতায় জল
50°C
25°C উষ্ণতায় জল
50°C
ভেবে বলো তো কোন ক্ষেত্রে জল 25°C থেকে 50°C অবধি উত্তপ্ত হতে বেশি তাপ নেবে? এক গ্লাস জল না কুড়ি গ্লাস জল?
উষ্ণতা একই পরিমাণ বাড়াতে এক বাটি জলের যত তাপ লাগে, এক বালতি জলের তার চেয়ে অনেক বেশি তাপ লাগে - এটা নিশ্চয়ই তোমরা বাড়িতে লক্ষ করেছ। তাই বলা যায় উপাদান একই থাকলে উষ্ণতা একই পরিমাণ বাড়াতে বেশি ভরের বস্তুর বেশি তাপ দরকার। উষ্ণতা নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়া বা কমার জন্য কোনো বস্তু কতটা তাপ বাইরে থেকে নেবে বা হারাবে, সেটা ওই বস্তুটার ভরের সঙ্গে সরল সম্পর্কে থাকে।
এবার হুবহু একরকম দুটো পাত্র নেওয়া হলো। একটা পাত্রে এক বাটি দুধ আর অন্য পাত্রে একই ভরের জল নেওয়া হলো। ধরা যাক দুধ ও জল উভয়েই ঘরের উষ্ণতায় (25°C) আছে। এবার একই ধরনের দুটি বার্নার দিয়ে দুধ ও জল আলাদা করে একই সময় ধরে উত্তপ্ত করা হলো।
55°C
53°C
দেখা যায়, একই সময় ধরে উত্তপ্ত করা সত্ত্বেও দুই তরলের উষ্ণতা আলাদা আলাদা হয়, দুধের উষ্ণতা জলের চেয়ে বেশি হয়। যেহেতু একই সময় ধরে গরম করা হয়েছে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় ওই দুই তরলকে একই পরিমাণ তাপ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সমান ভরের দুটি আলাদা পদার্থে সমপরিমাণ তাপ দেওয়া হলেও উষ্ণতা বৃদ্ধি সমান হয়নি। এ থেকে বলা যেতে পারে উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য একটি বস্তু কতটা তাপ গ্রহণ বা বর্জন করবে তা বস্তুটি কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি তার উপর নির্ভর করে। তাহলে নীচের তালিকাটি পূরণ করো-
তাপের পরিমাপ করার জন্য SI পদ্ধতিতে যে একক ব্যবহার করা হয় তা হলো জুল। এছাড়াও অন্য একটি এককও তাপ পরিমাপের জন্য প্রচলিত। সেটি হলো ক্যালোরি। ক্যালোরি কিন্তু SI একক নয়।
তাপ প্রয়োগে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন
এসো একটা পরীক্ষা করা যাক।
ঘরের উষ্ণতায় (ধরো 25°C) একটা গ্লাস নাও। এবার গ্লাসটার মধ্যে একটা বড়ো মাপের (গ্লাসের মধ্যে রাখা যায় এমন) বরফের টুকরো নাও। যদি একটা থার্মোমিটার দিয়ে তুমি বরফটার উষ্ণতা মাপতে তাহলে তুমি থার্মোমিটারে এই পাঠ 0°C পেতে।
ভৌত পরিবেশ
এই অবস্থায় কিছুক্ষণ রেখে দাও এবং কী ঘটছে তা লক্ষ করো। দেখতে পাচ্ছ বরফটা গলছে আর জলে পরিণত হচ্ছে। এবার আবার থার্মোমিটার দিয়ে বরফটার উষ্ণতা পরিমাপ করো। দেখা গেল এবারেও বরফের উষ্ণতা 0°C, অর্থাৎ বরফের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এবার গ্লাসটার গায়ে হাত দিয়ে দেখো। দেখবে গ্লাসটা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। যদি তুমি থার্মোমিটার দিয়ে গ্লাসটার উষ্ণতা মাপতে, তবে দেখতে গ্লাসের উষ্ণতা 25°C-র চেয়ে অনেক কমে গেছে।
নীচের সারণিটি পূরণ করো
পরীক্ষা শুরুর আগে | পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় উষ্ণতা বাড়ছে/ কমছে/একই রয়েছে |
---|---|
বরফের উষ্ণতা = 0°C | |
গ্লাসের উষ্ণতা = 25°C |
এভাবেই বারবার বরফ আর গ্লাসের উষ্ণতা মাপতে থাকলে, তুমি দেখতে পাবে, পুরো বরফটা গলে জলে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত বরফের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। কিন্তু গ্লাসে বরফ নেওয়ার পর থেকেই গ্লাসের উষ্ণতা কমতে থাকছে।
তাহলে গ্লাস নিশ্চয়ই তাপ হারিয়েছে। তবে সেই তাপ গেল কোথায়? তাহলে কী বরফের এই জলে পরিণত হওয়া আর গ্লাসের তাপ হারানোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?
আসলে গ্লাস কিছু তাপ হারিয়েছে। আর সেই তাপ গ্রহণ করেছে বরফ। আর তাতেই বরফ গলে জলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বরফের গ্রহণ করা এই তাপ বরফের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। তাই এই তাপকে লীন তাপ বলে। যে-কোনো পদার্থই তার এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় বদলে যাওয়ার সময়ে বাইরে থেকে কিছু লীন তাপ সংগ্রহ করে অথবা হারায়। কিন্তু এই তাপ ওই পদার্থের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। এক্ষেত্রে 0°C উষ্ণতার বরফ লীন তাপ সংগ্রহ করে 0°C উষ্ণতার জলে পরিণত হয়েছে। এইভাবে পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হওয়ার ঘটনাকে 'গলন' বলে। আর এই পরিবর্তনের সময় পদার্থ যে তাপ গ্রহণ করে তাকে গলনের লীন তাপ বলে। যেমন বরফ গলনের লীন তাপ 80 ক্যালোরি/ গ্রাম। অর্থাৎ 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বিশুদ্ধ বরফ ওই উষ্ণতার 1 গ্রাম বিশুদ্ধ জলে পরিণত হতে বাইরে থেকে 80 ক্যালোরি তাপ গ্রহণ করে।
এবার জেনে নেওয়া যাক, পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন কত রকমের হয়। নীচের তালিকাটা ভালো করে লক্ষ করো:
এবার নীচের সারণিটা পূরণ করো-
পদার্থ কোন অবস্থা থেকে কোন অবস্থায় বদলাচ্ছে |
অবস্থার পরিবর্তনের নাম | লীন তাপ গ্রহণ/বর্জন |
লীনতাপের নাম |
---|---|---|---|
কঠিন থেকে তরল | গলন | গলনের লীন তাপ | |
তরল থেকে কঠিন | কঠিনীভবন | বর্জন | |
তরল থেকে বাষ্প | বাষ্পীভবন | গ্রহণ | |
বাষ্প থেকে তরল | ঘনীভবন |
একক ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে যদি শুধু অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়, তখন ওই পদার্থ বাইরে থেকে যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে, সেই পরিমাণ তাপকেই ওই পদার্থের ওই অবস্থা পরিবর্তনের লীন তাপ বলে। 'ক' এবং 'খ' তালিকা দুটো ভালোভাবে লক্ষ করো। জল তার বিভিন্ন অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বাইরে থেকে কতটা লীন তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে তা এই তালিকা থেকে জানতে পারবে।
ক তালিকা
খ তালিকা
ভৌত পরিবেশ
হাতে স্পিরিট বা ইথার ঢাললে ওই জায়গাটায় ঠান্ডা অনুভূত হয়। আসলে, স্পিরিট বা ইথার উদবায়ী পদার্থ (এই ধরনের পদার্থের খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পীভবন হয়)। বাষ্পীভবনের জন্য দরকার লীন তাপ। স্পিরিট ওই লীন তাপ কোথা থেকে নেবে? স্পিরিট তখন আশপাশের পরিবেশ ও হাত থেকেই সেই লীন তাপ সংগ্রহ করে। ফলে হাতের ওই অংশ তখন তাপ হারায়। তখন পাশাপাশি অঞ্চলের তুলনায় ওই অংশের উষ্ণতা কমে যায়। ফলে ওই অংশে ঠান্ডার অনুভূতি হয়।
মাটির কলশির জল ঠান্ডা থাকে। আসলে, মাটির কলশির গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্রগুলো দিয়ে সামান্য পরিমাণ জল কলশির বাইরে বেরিয়ে আসে। তখন তার বাষ্পীভবন ঘটে। ফলে দরকার হয় লীন তাপের। ওই বেরিয়ে আসা জল তখন কলশি এবং কলশির ভেতরে থাকা জল থেকে প্রয়োজনীয় লীন তাপ সংগ্রহ করে। ফলে কলশি ও কলশির জল তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়ে পড়ে।
এখন দেখো তো তুমি নীচের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা করতে পারো কিনা।
- স্নান করে ওঠার পর পাখা চালিয়ে তার নীচে দাঁড়ালে ঠান্ডা বোধ হয়।
- জল দিয়ে ঘর মোছার পর মেঝে ঠান্ডা হয়।
- গরমকালে ঘরের জানালা-দরজা খোলা রেখে ভেজা পরদা টাঙানো হলে ঘর বেশ ঠান্ডা থাকে।
জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় তাপের ভূমিকা
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
জীবের আকৃতি, প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার তারতম্যের পিছনে তাপ ও উষ্ণতার প্রভাব আছে। শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রাণী গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার ওইসব প্রাণীর তুলনায় বেশি লোমশ (যেমন- কুকুর) । গরমের দিনে মানুষের গা থেকে দরদর করে ঘাম পড়ে। কুকুরের জিভ থেকে লালা পড়ে। সবই দেহকে ঠান্ডা রাখার জন্য । আবার মেরু ভালুকের দেহে ঘন লোম বা পেঙ্গুইনদের গা জড়াজড়ি করে থাকা সবই শরীরকে গরম রাখার জন্য । খুব গরমে চারাগাছ শুকিয়ে যায়। আবার গরম বালিতে গিরগিটি, সাপের মতো ঠান্ডা রক্তের প্রাণীরা রোদ পোহায় । এসব ঘটনা তাপের প্রভাবেই ঘটে ।
কোনো জীব কতটা তাপ দেহের ভেতরে তৈরি করতে পারে এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ওই জীবের কতটা পরিমাণ তাপের আদান-প্রদান হয়, তার ভিত্তিতেই বিভিন্ন জীবের দেহে তাপের তারতম্য হয় ।
দেহের তাপমাত্রা বা উষ্ণতা বেড়ে গেলে এসো দেখি মানুষ কী কী করে
- 1. বাড়িয়ে দেয়।
- 2. হার বেড়ে যায়।
- 3. ব্যাস বেড়ে যায়।
- 4. পরিমাণ কমে যায়।
- 5. অনীহা ও কুঁড়েমি দেখা যায়।
নীচের শব্দভাণ্ডার থেকে ওপরের শূন্যস্থানগুলি পূরণ করো (শব্দভান্ডার: শ্বাসক্রিয়া, খাদ্যগ্রহণের, ঘাম বেরোনোর, কাজে, রক্তনালীর)।
আবার দেহের তাপমাত্রা বা উষ্ণতা কমে গেলে মানুষের শরীরে কী কী ঘটে তা নীচের শব্দভান্ডারের সাহায্যে লেখো (শব্দভাণ্ডার: কাঁপুনি, খাদ্যগ্রহণ, ঘাম বেরোনোর, লোম)।
- 1.
- 2.
- 3.
- 4.
বাবলা, আমরুল, শুশনি ও রাধাচূড়ার মতো কিছু গাছের পাতা দিনের বেলায় একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় খুলে যায় । আবার রাত হলে মুড়ে যায় । আবার বহু ফুলের পাপড়ি পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে খুলে যায় । তোমার চারদিকে জীবজগতের ওপর তাপের প্রভাবের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করো ও নীচের খোপে লেখো।
ভৌত পরিবেশ
আলো
প্রাত্যহিক জীবনে আলো সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ও আলোর সরলরৈখিক গতি
- জানালা থেকে একটু দূরে উজ্জ্বল রোদে ঘরের মধ্যে তুমি পড়তে বসেছ। এমন সময় তোমার মা জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ব্যাস, উজ্জ্বল রোদের বদলে একটা ছায়া এসে হাজির। এখন সব আবছা আবছা হয়ে গেল।
- অনিরুদ্ধ দুপুরবেলা ঝিলপাড়ে বটগাছের তলায় বসেছিল। তন্ময় হয়ে দেখছিল জলে ঢেউ-এর খেলা। কিন্তু হঠাৎই চোখ যেন আলোয় ধাঁধিয়ে উঠছিল। তখন ঢেউগুলোকে চকচকে লাগছিল।
- আনোয়ারা খালি বালতিটা যখন জল দিয়ে ভরতি করল তখন হঠাৎই বালতিটার উপর থেকে দেখে ও অবাক হয়ে গেল। বালতির গভীরতা যেন কমে গেছে মনে হচ্ছে।
- সুজাতা একদিন দুপুরবেলা বিছানায় শুয়ে ছিল। ঘুম আসছিল না। হঠাৎই দেখতে পেল ভেন্টিলেটর দিয়ে সূর্যের আলো উলটো দিকের দেয়ালে পড়ে কতগুলো গোল গোল আলোর চাকতি তৈরি করেছে। কিন্তু ওইরকম গোল গোল আকৃতি কেন?
- পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যুষ প্রতিদিন দেখে পুকুরে গাছের আর পুকুর পাড়ের বাড়িগুলোর কেমন সুন্দর ছবি পড়ে। পুকুরটা ঠিক যেন একটা আয়না।
- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সুমি ভাবে ও যখন ওর ডান হাত নাড়ে তখন আয়নায় ওর ছবিটা একই রকমভাবে তার বাঁ-হাত নাড়ে কেন?
- একটা সোজা লাঠিকে লম্বভাবে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল মৃণ্ময়। প্রতিদিন ওটার ওপর রোদ পড়ে। মৃণ্ময় প্রতিদিন ওর ছায়াটা লক্ষ করে। ছায়াটা কখনও ছোটো হয় কখনও বা বড়ো। কিন্তু মৃণ্ময় অবাক হয়ে দেখে, সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরে, তখন লাঠির প্রায় কোনো ছায়াই পড়ে না।
- অরুণিমা একদিন জলভরতি বালতির মধ্যে একটা লাঠি ডুবিয়ে দেখে যে লাঠিটা যেন বাঁকা। কিন্তু যেই না লাঠিটাকে জলের ওপরে তুলল অমনি ওটা আবার সোজা হয়ে গেল।
এরকম কত ঘটনাই আমরা দেখি প্রতিদিন আমাদের চারপাশে। এসবই আলোর খেলা। আলো সম্বন্ধে জানলে, এসব ঘটনা কেন ঘটে তা বোঝা যায়। আমরা এখন সেটাই করব- জানব আলোর নানা কথা। দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সব কিছু দেখতে পাই-খাট, আলমারি, চেয়ার, টেবিল সব কিছু। আর যখন রাত্রি নেমে আসে, ঘরের ভিতরের আলো নিভে যায়, চাঁদের আলো বা রাস্তার আলো জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারে না, তখন আমরা ঘরের ভিতরের কোনো জিনিসই দেখতে পাই না। আন্দাজে ঠাহর করে চলতে হয়। অথচ যদি একটা জোনাকি পোকা কোনোভাবে ঘরে ঢুকে পড়ে সেটাকে দেখতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
এবার ভেবে বলো তো, জোনাকি পোকাটাকে তুমি দেখতে পেলে কেন? অন্য জিনিসগুলোকে দিনেরবেলায় দেখতে পেলেও রাত্রিবেলায় অন্ধকারে দেখতে পাওনি কেন? রাত্রিবেলাতেও যদি তুমি ওই জিনিসগুলোকে দেখতে চাও, তাহলে তোমার কী চাই? তাহলে দেখা গেল কিছু কিছু বস্তু আছে যাদের নিজস্ব আলো আছে অর্থাৎ এই বস্তুগুলো থেকে নিজস্ব আলো নির্গত হয়। এই বস্তুগুলোকে 'স্বপ্রভ বস্তু' বা 'আলোক উৎস' বলে। যেমন সূর্য, তারা, জোনাকি ইত্যাদি। আবার যে বস্তুগুলোর নিজস্ব আলো নেই সেই বস্তুগুলোকে 'অপ্রভ বস্তু' বলে। যেমন- ইট, কাঠ, পাথর ইত্যাদি।
নীচের সারণিটা পূরণ করো।
বস্তু | স্বপ্রভ | অপ্রভ |
---|---|---|
কেরোসিন লম্ফ | ||
পেন | ||
জামার বোতাম | ||
মোমবাতি (জ্বলন্ত) | ||
জোনাকি | ||
ছাতা | ||
তারা | ||
চশমা | ||
সূর্য | ||
চাঁদ |
দাও।
আলোর উৎস যদি আকারে খুব ছোটো হয়, আমরা অনেক সময় তাকে বিন্দু-উৎস বলি। একটি টর্চের আলোর সামনে কালো কার্ডবোর্ড রেখে ওই বোর্ডের গায়ে পিন দিয়ে একটি ছিদ্র করা হলো। ওই ছিদ্র দিয়ে যখন টর্চের আলো বেরিয়ে আসছে তখন ছিদ্রটিকে বিন্দু আলোকউৎস বলে ভাবা যেতে পারে। তবে একথা ভুললে চলবে না যে জ্যামিতিতে আমরা বিন্দু বলতে যা বুঝি সেরকম অনেক বিন্দু মিলেই আসলে এইসব বিন্দু উৎসগুলো তৈরি। খুঁটিয়ে বিচার করলে তাই ওই কার্ডবোর্ডের ছিদ্র বিশুদ্ধ অর্থে বিন্দু-উৎস নয়।
ভৌত পরিবেশ
স্বপ্রভ বস্তু নিজে যেমন আলোর উৎস, তেমনি অপ্রভ বস্তুও আলোর উৎস হিসেবে আচরণ করতে পারে। কোনো স্বপ্রভ বস্তু থেকে আলো অপ্রভ বস্তুতে পড়লে ঠিকরে বেরোয়। যেমন স্টিলের বাসন একটি অপ্রভ বস্তু, কিন্তু তাতে সূর্যের আলো পড়ে সেই আলো ঠিকরে দেয়ালে যখন পড়ে তখন স্টিলের বাসনটিই আলোর উৎসের মতো আচরণ করে। 'বিন্দু আলোক উৎসের' চেয়ে আকারে বড়ো আলোক উৎসকে 'বিস্তৃত আলোক উৎস' বলে। যেমন- টর্চ, সূর্য, বৈদ্যুতিক বালব ইত্যাদি।
কাচের জানালা বন্ধ করে রাখলেও বাইরের রোদ তা দিয়ে ঘরে ঢোকে। কিন্তু কাঠের জানালায় তো তা হয় না। আলো সবরকম পদার্থের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না। ভেবে দেখত, জলের মধ্যে দিয়ে কি আলো যেতে পারে? তুমি কি জল ভরতি পাত্রের তলদেশ বাইরে থেকে দেখতে পাও? বায়ু, স্বচ্ছ কাচ, জল ইত্যাদি বস্তুগুলোকে 'স্বচ্ছ বস্তু' বা 'স্বচ্ছ মাধ্যম' বলে। এধরনের বস্তুর মধ্যে দিয়ে আলো সহজেই যাতায়াত করতে পারে। আবার, কাঠ, দেয়াল, লোহা ইত্যাদি যেসব বস্তুর মধ্যে দিয়ে আলো একেবারেই চলাচল করতে পারে না, তাদের 'অস্বচ্ছ বস্তু' বা 'অস্বচ্ছ মাধ্যম' বলে। জানালা বন্ধ রয়েছে। জানালায় ঘষা কাচ লাগানো। জানালার বাইরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। আবছা একটা মূর্তি। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। জানালা বন্ধ অবস্থায় যখন ওই কাচ দিয়ে ঘরে রোদ আসে, তখন হালকা, ফিকে হওয়া রোদ আসে। আসলে ঘষা কাচ, কুয়াশা, ট্রেসিং পেপার ইত্যাদি বস্তুর মধ্যে দিয়ে আলো যাতায়াত করতে পারলেও, ভালোভাবে পারে না। তাই এই সমস্ত বস্তু বা মাধ্যমকে বলে 'ঈষৎ স্বচ্ছ বস্তু' বা 'ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম' ।
দরকারি কথা
কোনো মাধ্যম ছাড়াও আলো চলাচল করতে পারে। সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে এক বিরাট অংশে কোনো মাধ্যম থাকে না। তবু প্রতিদিন সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছোয় ।
আলোর সরলরৈখিক গতি
হাতেকলমে 1
একটা শক্ত ও সোজা দু-মুখ খোলা পাইপ নাও। এবার এক চোখ বন্ধ করে পাইপটার মধ্য দিয়ে একটা জ্বলন্ত মোমবাতির শিখাকে দেখার চেষ্টা করো ।
এবার একটা বাঁকা পাইপ নাও। পাইপটার মধ্য দিয়ে আগের মতো করেই শিখাটাকে দেখার চেষ্টা করো। বাঁকানো পাইপের মধ্য দিয়ে মোমবাতির শিখাটাকে আর দেখতে পাচ্ছ কি? কেন এমন হলো ভাবত।
কোনো বস্তুকে দেখতে হলে ওই বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়তে হবে। তবেই সেই বস্তুকে দেখা সম্ভব। প্রথম ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। তাহলে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কি মোমবাতির শিখা থেকে আসা আলো তোমার চোখ অবধি পৌঁছোতে পারেনি? কেন পারল না? আলো কি তবে আসার পথে কোথাও বাধা পেয়েছে? কেনই বা বাধা পেল? প্রথম ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রের আলোর যাত্রাপথের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
পাইপটা সোজা থাকায় আলো প্রথম ক্ষেত্রে শিখা থেকে চোখে পৌঁছোতে পেরেছে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পাইপটা ছিল বাঁকা। আর তাই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আলো চোখে এসে পৌঁছোতে পারেনি।
তাহলে বলা যায়:
আলো সরলরেখায় চলাচল করে। এটা আলোর একটা ধর্ম। আলোর আচার-আচরণকে বুঝতে আমরা জ্যামিতির চিত্রের সাহায্য নিই। আলোর যাত্রাপথকে ওই চিত্রে তির চিহ্ন যুক্ত সরলরেখার সাহায্যে বোঝানো হয়। আলোর চলার পথকে তির চিহ্ন যুক্ত যে কাল্পনিক সরলরেখা দিয়ে বোঝানো হয়, তাকে 'আলোক রশ্মি' (Ray of light) বলে। একটি আলোকরশ্মি বলে বাস্তবে কিছু নেই।
একসঙ্গে অসংখ্য আলোক রশ্মিকে, 'আলোক রশ্মিগুচ্ছ' (Beam of light) বলে। আলোক রশ্মিগুচ্ছ তিন ধরনের হয়।
সমান্তরাল আলোক রশ্মিগুচ্ছ অপসারী আলোক রশ্মিগুচ্ছ অভিসারী আলোক রশ্মিগুচ্ছ
ভৌত পরিবেশ
প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তোমার ঘরে টিউবলাইট (অথবা আলোর অন্য কোনো উৎস) জ্বলছে। তুমি লাইটটার ঠিক উলটো দিকের দেয়ালের কাছে তোমার হাত রাখলে। সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালে তোমার হাতের তালুর আকৃতি একটা অন্ধকার জায়গা গঠিত হলো। তোমার হাতের তুলনায় আকৃতিটা একটু বড়ো। ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলে দেখা যায়, ওই অন্ধকার আকৃতির মাঝখানের অংশ বেশ গাঢ়। আর ওই গাঢ় অন্ধকার অংশকে ঘিরে রয়েছে একটা আবছা অন্ধকার অংশ।
উপচ্ছায়া
প্রচ্ছায়া
ওই গাঢ় অন্ধকার অংশটা হলো ছায়া বা প্রচ্ছায়া। আর প্রচ্ছায়াকে ঘিরে থাকা আবছা অন্ধকার অংশটা হলো উপচ্ছায়া।
তুমি হাতটা যত দেয়ালের কাছে নিচ্ছ, দেখবে ছায়া তত ছোটো হচ্ছে। আর উপচ্ছায়াও কমছে। যখন হাত দেয়ালের খুব কাছে, তখন উপচ্ছায়া একেবারেই নেই। শুধুই প্রচ্ছায়া।
আবার হাত যত দেয়াল থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছ, তুমি দেখবে ছায়ার অংশটা ক্রমেই ছোটো হচ্ছে আর উপচ্ছায়া ক্রমেই বড়ো হচ্ছে। কী দেখতে পেলে? দেয়ালে শুধুই তোমার হাতের ছায়া। উপচ্ছায়া অনুপস্থিত।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আলোক উৎস বড়ো হলে প্রচ্ছায়া আর উপচ্ছায়া দুটোই গঠিত হয়। আবার উৎস যদি বিন্দু উৎস বা ছোটো উৎস হয় তখন উপচ্ছায়া গঠিত হয় না। শুধুই ছায়া গঠিত হয়।
এবার টিউবলাইটটা নিভিয়ে দাও। বন্ধুকে বলো একটা ছোট্ট মোমবাতি জ্বালিয়ে তোমার হাতের পেছনে ধরতে (ছবিতে দেখো)। (একটা কালো পিচবোর্ডের মাঝে পেরেক দিয়ে ফুটো করে মোমবাতির আলো ওই ফুটো দিয়ে পাঠাতে পারলে পরীক্ষাটা আরো ভালো হবে।)
এবার হাতকে মোমবাতির কাছে নিয়ে যাও। কী দেখতে পাচ্ছ? ছায়া ক্রমশ বড়ো হতে থাকছে । হাত আবার আগের স্থানে নিয়ে এসো ।
এবার, হাতকে দেয়ালের কাছে নিয়ে যেতে থাকো। কী দেখছ? ছায়া ক্রমশ ছোটো হচ্ছে । দেয়ালে স্পর্শ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ছায়ার দৈর্ঘ্য ও হাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়ে গেল ।
এবার মোমবাতিটা হাতের কাছ থেকে দূরে সরাতে থাকো। কী দেখতে পেলে? ছায়া ক্রমেই ছোটো হতে থাকছে । মোমবাতিকে আবার আগের স্থানে নিয়ে এসো ।
আলোর প্রতিসরণ
হাতেকলমে 4
একটা কাচের গ্লাসে কিছুটা জল নাও । ওপর থেকে জলের যে তল দেখতে পাচ্ছ তা বায়ু ও জলকে আলাদা করেছে । জলের এই তল হলো বায়ু ও জলের বিভেদ তল । এবার ওই গ্লাসের মধ্যে ধীরে ধীরে গা চুঁইয়ে অল্প নীল কেরোসিন তেল নাও । এবার গ্লাসের পাশ থেকে জলের ভিতর দিয়ে ওপরের দিকে তাকাও । কী দেখতে পাচ্ছ? যে নীলরঙের গোল তলটা দেখতে পাচ্ছ সেটা 'কেরোসিন ও জলের বিভেদতল' । জল যেখানে শেষ হয়েছে আর কেরোসিন যেখান থেকে শুরু হয়েছে অর্থাৎ দুই আলাদা আলাদা ঘনত্বের মাধ্যমের সংযোগস্থলে যে তল, তাকেই ওই মাধ্যম দুটোর 'বিভেদতল' বলে ।
হাতেকলমে 5
নীচের পরীক্ষাটি তোমরা দেখবে, নিজে হাতে করবে না। তোমাদের শিক্ষক বা শিক্ষিকা ক্লাসে করে দেখাবেন। উপকরণ: একটা কাচের ব্লক বা বুদবুদহীন নিরেট পেপারওয়েট বা কাচের ব্লক, একটা লেজার টর্চ, সাদা একটা পর্দা।
তোমাদের শিক্ষক/শিক্ষিকা লেজার টর্চটা জ্বালিয়ে দেয়ালের দিকে ধরলেন। ফলে দেয়ালে একটা আলোর বিন্দু তৈরি হলো। কিন্তু টর্চটা মাস্টারমশাই বা দিদিমণির হাতে থাকায় আলোক বিন্দুটা নড়ছে। তাই একটা টেবিলের ওপর টর্চটা রাখা হলো। এবার টর্চটা স্থির হলো। তাই আলোর বিন্দুটাও স্থির হলো। দেয়ালে বিন্দুটাকে 'A' লিখে চিহ্নিত করা হলো। এরপর কাচের ব্লক বা পেপারওয়েটটা ওই আলোর পথে ধরা হলো। আলো এবার কাচের মধ্যে দিয়ে গিয়ে দেয়ালে পড়েছে। এবার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখত আলোর বিন্দুটা দেয়ালে 'A' - চিহ্নিত জায়গাতেই পড়ল, না সরে গেল? আলোক বিন্দুটা সরে গেল কেন? ভাবো।
তাহলে কি আলো তার গতিপথ পরিবর্তন করল? কেন করল?
ভাবো। এবার কাচের ব্লক বা পেপারওয়েট সরিয়ে দাও। এবার কী দেখলে? আলোক বিন্দু কি আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেল? তাহলে কি ওই কাচের ব্লক বা পেপারওয়েটটাই এজন্য দায়ী?
আলোকরশ্মি কোনো মাধ্যম দিয়ে যেতে যেতে যদি অন্য কোনো আলাদা মাধ্যমে প্রবেশ করে, তখন ওই মাধ্যম দুটির বিভেদতল থেকে আলোর গতিপথের পরিবর্তন ঘটে। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
চিত্র - 1
চিত্র - 2
OB - প্রতিসৃত রশ্মি, $\angle AOC$ আপতন কোণ ( ), $\angle DOB$-প্রতিসরণ কোণ (r), EOF -মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতল, COD-অভিলম্ব।
চিত্র 1-এ আলোকরশ্মি মাধ্যম 1-থেকে মাধ্যম 2-তে প্রবেশ করেছে ও অভিলম্ব থেকে দূরে সরে গেছে। যে মাধ্যমে প্রবেশ করলে আলোকরশ্মি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায় সেই মাধ্যমটিকে আলোর ক্ষেত্রে লঘুতর মাধ্যম বলা হয়। এখানে মাধ্যম 2, মাধ্যম 1-এর চেয়ে লঘুতর।
চিত্র 2-এ আলোকরশ্মি মাধ্যম 2-তে প্রবেশ করার পর অভিলম্বের দিকে সরে গেছে। যে মাধ্যমে প্রবেশ করলে আলোকরশ্মি অভিলম্বের দিকে সরে যায় সেই মাধ্যমকে আলোর ক্ষেত্রে ঘনতর মাধ্যম বলা হয়। এক্ষেত্রে মাধ্যম 2, মাধ্যম 1-এর চেয়ে ঘনতর।
ধরা যাক, আলোক রশ্মিগুচ্ছ কোনো মাধ্যম দিয়ে চলতে চলতে দ্বিতীয় কোনো ভিন্ন ঘনত্বের মাধ্যমে যাত্রা করছে। দেখা যায় ওই আলোক রশ্মিগুচ্ছের কিছু অংশ মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতল থেকে পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। এই ঘটনাটাই আলোর প্রতিফলন। আলোক রশ্মিগুচ্ছের বাকি অংশ দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশের পর আগেকার যাত্রাপথ থেকে সরে যায় ও নতুন সরলরেখা বরাবর চলে। এই ঘটনাকে বলে আলোর প্রতিসরণ।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
প্রতিবিম্ব
হাতেকলমে 6
একটা আয়নার সামনে একটু কোণ করে (ছবির মতো) একটা টর্চ ধরো।
এবার টর্চটা জ্বালাও।
কী দেখলে?
আয়নায় টর্চের আলোর প্রতিফলন ঘটে আলো যে দিকে বেরিয়ে এল, তোমার চোখকে সেদিকে নিয়ে যাও।
এবার ওই দিক থেকে আয়নার মধ্যে তাকাও। কী দেখতে পাচ্ছ?
তোমার কি মনে হচ্ছে আলোটা আয়নার ভিতরে থাকা একটা টর্চ থেকে আসছে?
সত্যিই কি আলো আয়নার ভিতরে থাকা টর্চ থেকে আসছে?
সত্যিই কি আয়নার ভিতরে কোনো টর্চ আছে?
আয়নার ভিতরে যে টর্চটা তুমি দেখেছ, সেটা আসলে তোমার হাতে থাকা (আয়নার বাইরে) টর্চটার প্রতিবিম্ব। এই ঘটনাটা ঘটেছে আলোর প্রতিফলন ধর্মের জন্য।
যে-কোনো চকচকে তলের উপর বস্তু থেকে আসা আলোকরশ্মির প্রতিফলনের ফলে এমনই প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। বস্তুটি চকচকে তলটির যে দিকে থাকে, বস্তুর প্রতিবিম্ব ঠিক তার উলটোদিকে তৈরি হয়। আলোকরশ্মির চিত্র এঁকে প্রতিবিম্ব তৈরি হওয়ার ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা হয়। P - বস্তু, P'-প্রতিবিম্ব, MM'- আয়না।
যে-কোনো চকচকে তল- সানগ্লাসের কাচ, চকচকে পালিশ করা টেবিল, পুকুরের জল, জানালার গাঢ় রঙের চকচকে কাচ ইত্যাদির মধ্যে এমন প্রতিবিম্ব গঠিত হওয়া সম্ভব।
হাতেকলমে 7
তুমি একটা বড়ো আয়নার সামনে দাঁড়াও। আয়নায় গঠিত হওয়া তোমার প্রতিবিম্বের দিকে লক্ষ করো।
ভৌত পরিবেশ
তোমার আর তোমার প্রতিবিম্বের উচ্চতা কি এক?
এবার একটা পেন হাতে নিয়ে আয়নাটার উপর শুইয়ে দিয়ে, আঙুল দিয়ে চেপে ধরো। এবার দেখত তোমার আঙুলে চাপা পেন (আয়নার বাইরে) আর আয়নার ভিতরকার পেনের প্রতিবিম্ব একেবারে সমান মাপের কিনা?
আয়নায় গঠিত 'প্রতিবিম্ব'ও 'বস্তুর মাপ' (Size) সমান।
এবার একটি আয়না থেকে তুমি ঠিক মেপে মেপে 'চার পা' পিছিয়ে এসে দাঁড়াও। এবার এক পা এক পা করে আয়নার দিকে এগোতে থাকো, আর তোমার প্রতিবিম্বের দিকে লক্ষ রাখো। প্রতিবিম্বও কি তোমার সঙ্গে সঙ্গে এক পা এক পা করেই তোমার দিকে এগোচ্ছে?
তুমি আয়না পর্যন্ত পৌঁছোতে যত দূরত্ব অতিক্রম করলে তোমার প্রতিবিম্বও কী আয়না পর্যন্ত পৌঁছোতে তত দূরত্বই অতিক্রম করল?
তাহলে বলা যায়, 'বস্তু থেকে আয়না ও আয়না থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্ব সমান'।
তোমার ডান হাতটা দিয়ে আয়নাটাকে স্পর্শ করো। -প্রতিবিম্ব কোন হাত দিয়ে আয়নাটাকে স্পর্শ করল?
তোমার বাঁ পা-টা একটু ওঠাও। তোমার প্রতিবিম্বের কোন পা উঠল?
তবে বলা যায় আয়নায় বস্তুর প্রতিবিম্বের পার্শ্ব পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ ডান দিকটা বাঁ দিক ও বাঁ দিকটা ডান দিক মনে হয়। কিন্তু উপরটা উপর দিকে এবং নীচেরটা নীচের দিকেই থাকে। অর্থাৎ আয়নায় গঠিত প্রতিবিম্ব সমশীর্ষ।
আয়নায় প্রতিফলনের ফলে, A থেকে Z পর্যন্ত কোন কোন অক্ষরের প্রতিবিম্বের পার্শ্বপরিবর্তন হয় তা ভেবে লেখো।
AMBULANCE কথাটা অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে উলটে লেখা থাকে কেন? দলে আলোচনা করে উত্তর খাতায় লেখো।
MAJUSMA
হাতেকলমে 8
একটা কাচের গ্লাসের মধ্যে একটা পেন বা সোজা কাঠি রাখো।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
এবার গ্লাসটাতে কিছুটা জল ঢালো। পেন বা কাঠিটার কোনো অংশে কি কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছ? পরিবর্তন হলে সেটা কোন অংশে? পেন বা কাঠিটার নীচের অংশ যেখান থেকে জলের ভেতরে আছে সেখান থেকে পেন বা কাঠিটাকে বাঁকা লাগছে কেন? পেন বা কাঠিটাকে জল থেকে তুলে দেখো তো পেন বা কাঠিটা সত্যিই বেঁকেছে কিনা? আসলে গ্লাসে জল ভরার পরই যেহেতু ঘটনাটা ঘটেছে, আবার জল থেকে পেন বা কাঠি তুলে নিলে পেন বা কাঠিটা যেহেতু সোজাই থাকে, তাহলে বোঝা যাচ্ছে, গ্লাসে জল ঢালাই এর কারণ। আসলে গ্লাসে জল ঢালার পর গ্লাসের ভিতরে দুটো মাধ্যম থাকে। (1) জল (ঘনতর মাধ্যম) ও (2) বায়ু (লঘুতর মাধ্যম)। পেন বা কাঠির জলের তলার অংশ থেকে আলো যখন জল (ঘনতর মাধ্যম) পেরিয়ে বায়ুতে (লঘুতর মাধ্যম) পৌঁছোয় তখন মাধ্যম দুটির বিভেদতল থেকে আলো বেঁকে গিয়ে তোমার চোখে এসে পড়ে। তোমার চোখ তখন আসল পেন বা কাঠিটার নিমজ্জিত অংশ নয়, পেন বা কাঠির নিমজ্জিত অংশের প্রতিবিম্বটি দেখো। প্রতিসরণের জন্যও প্রতিবিম্ব তৈরি হয়।
হাতেকলমে 9
একটা খালি বালতি নাও। একটা পেনসিল দিয়ে বালতির ভিতরের দেয়ালে উপরের দিকে একটা দাগ দাও (ছবি দেখো)। এবার একটা সোজা লাঠি দিয়ে বালতির তলা থেকে ওই পেনসিলের দাগ অবধি মেপে লাঠির গায়েও একই উচ্চতায় পেনসিলের দাগ দাও। এরপর লাঠিটা তুলে নাও।
এবার বালতিতে ওই দাগ অবধি জল ঢালো। বালতির উপর থেকে তাকাও। কী দেখছ? বালতিটার তল কিছুটা উপরে উঠে এসেছে বলে মনে হচ্ছে কি? বালতিটা কম গভীর লাগছে? এবার জল থাকা অবস্থায় লাঠিটা দিয়ে বালতির দাগ অংশের উচ্চতা আবার মাপো। কী দেখলে? কাঠির দাগের সঙ্গে বালতির দাগ মিলে যাচ্ছে। তবে বালতির তল কি সত্যি সত্যি উপরে উঠে আসেনি? আসলে প্রতিসরণের জন্য এই ঘটনাটা ঘটেছে। বালতির তলদেশ থেকে আসা আলোক রশ্মিগুচ্ছ যখনই জল (ঘনতর মাধ্যম), পেরিয়ে বায়ুতে (লঘুতর মাধ্যম) প্রবেশ করে, সেইসময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতল থেকে আলোক রশ্মিগুচ্ছ অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়। ফলে বেঁকে যাওয়া প্রতিসৃত রশ্মিগুচ্ছ যখন তোমার চোখে এসে পড়ে তখন তুমি ওই তলের প্রতিবিম্বকে দেখো, যা প্রকৃত তলদেশের কিছুটা উপরে অবস্থান করছে বলে মনে হয়। তাই তোমার মনে হয়েছে তলটা উপরে উঠে এসেছে।
ভৌত পরিবেশ
বর্ণালি
হাতেকলমে 10
জানালার ফাঁক দিয়ে তোমার ক্লাসরুমের মেঝেতে, যেখানে কড়া রোদ এসে পড়েছে, সেখানে একটা সাদা কাগজ বিছিয়ে দাও। এবার একটা প্রিজম নিয়ে ওই আলোর পথে সাদা কাগজটার কাছাকাছি ধরো। কী দেখতে পাচ্ছ?
এত রং কোথা থেকে এল? ভালো করে দেখো কি কি রং তুমি ওই রঙিন আলোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছ। সূর্যের আলো আসলে অনেক আলাদা রং-এর আলোর সমষ্টি। এধরনের আলোকে যৌগিক আলো বলে। সূর্যের আলো কাচের প্রিজমের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বিভিন্ন রং-এর আলো আলাদা হয়ে যায়। আমরা ওই রংগুলোর মধ্যে চোখে দেখে মোটামুটিভাবে সাতটা রং-এর আলো আলাদা করতে পারি। এই সাতটা আলাদা হওয়া আলোর পটিকে একসঙ্গে বলে 'বর্ণালি'। আর যৌগিক আলো থেকে এইভাবে বিভিন্ন রং-এর আলোগুলোর আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বিচ্ছুরণ বলে। 1666 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন বিচ্ছুরণ আবিষ্কার করেন। সূর্যের আলোর মধ্যে থাকা এই সাতটা রং-এর আলোগুলো হলো-
- 1) বেগুনি (Violet)
- 2) নীল (Indigo)
- 3) আসমানি (Blue)
- 4) সবুজ (Green)
- 5) হলুদ (Yellow)
- 6) কমলা (Orange)
- 7) লাল (Red)
কিন্তু এই বিচ্ছুরণ পদ্ধতিতে বর্ণালির সাতটা রং-এর আলোর পটিকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবে না। তার কারণ হলো আলোর পটিগুলো একটার উপর আর একটা এসে পড়তে পারে। ফলে মাঝের বর্ণগুলো ভালোভাবে দেখা যায় না।
তুমি আকাশে কখনও রংধনু দেখেছ?
আকাশের রংধনু আসলে সূর্যের সাদা আলোর বিচ্ছুরণের প্রাকৃতিক ঘটনা মাত্র। রংধনু সাধারণত বৃষ্টির পর বিকেলের আকাশে দেখতে পাওয়া যায়। আকাশে ভাসমান জলকণা থাকে। ওই জলকণার মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো যাওয়ার সময় বিচ্ছুরণের ফলে আকাশে যে সাতটা আলোর পটি গঠিত হয় সেটাই রংধনু।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
অদৃশ্য আলোর ক্ষতিকারক প্রভাব
অতিবেগুনি রশ্মি:
সূর্য থেকে যে আলো এসে পৃথিবীতে পড়ে তার সবটুকু আমরা চোখে দেখতে পাই না, অদৃশ্য আলোও কিছু আছে। চোখে দেখতে না পেলেও অদৃশ্য আলো যে আছেই বিজ্ঞানীদের কাছে তার অনেক প্রমাণ আছে। অদৃশ্য আলোর একটা অংশ হলো অতিবেগুনি আলো, ইংরেজিতে আল্ট্রাভায়োলেটলাইট (ultraviolet light)। এর শক্তি দৃশ্যমান আলোর চেয়ে অনেক বেশি, তাই জীবন্ত কোশের পক্ষে অতিবেগুনি আলো অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সরাসরি চোখে পড়লে চোখের লেন্সের ক্ষতি হয়, চোখের মধ্যের যে আলোক সংবেদী স্তর (বা রেটিনা) আছে তারও ক্ষতি করে। এছাড়াও চামড়ায় সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি পড়লে চামড়ার ক্যানসারও হতে পারে। তাহলে জীবজগৎ সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে বাঁচবে কী করে? পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরদিকে ওজোন গ্যাসের স্তর আছে। এই ওজোন স্তর সূর্যরশ্মির অতিবেগুনি রশ্মিকে আসতে বাধা দেয়। তা না হলে আমাদের খুবই বিপদ হতো।
ওজোন স্তর আছে বলে নিশ্চিন্ত হবার দিন আর নেই। মানুষের কর্মকাণ্ডে এমন সব গ্যাসীয় পদার্থ ওজোন স্তরে পৌঁছোচ্ছে যারা ওজোন অণুকে ভেঙে দেয়, বা তৈরি হতেও বাধা দেয়। এর ফলে ধীরে ধীরে ওজোন স্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চামড়ার মেলানিন বলে একরকমের রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়। চামড়ায় অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়লে তাকে শুষে নিয়ে মেলানিন আমাদের চামড়ার নীচের কোশগুলোকে বাঁচিয়ে দেয়। মেলানিন বেশি থাকলে চামড়া বাদামি বা কালো হয়ে যায়। লক্ষ করে দেখো, আফ্রিকা পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে, তাই সেখানে সূর্য রশ্মি খুব প্রখর। সেখানকার কালো মানুষদের চামড়ার মেলানিনের পরিমাণও তাই অনেক বেশি। বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের সাদা চামড়ার মানুষদের চামড়ায় কিন্তু মেলানিনের পরিমাণ অনেক কম। তাই সাদা চামড়ার মানুষদের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে কোশের খুব দরকারি ডি.এন.এ অণুর (DNA) ক্ষতি হয়। ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীতে চামড়ার ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এক্স রশ্মি:
তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে হাত ভাঙলে, বা পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পেলে ডাক্তারবাবু 'এক্স-রে' করিয়ে আসতে বলেন। এক্স-রশ্মি (X-Ray) কী? 'রে' মানে রশ্মি বা আলো। এক্স রেও একরকমের অদৃশ্য আলো। এক্স-রশ্মি চামড়া আর মাংস ভেদ করে যেতে পারে। এক্স রশ্মি হাড়ের মধ্যে দিয়ে চলে যেতে পারে না তাই হাড়ের কোনখানটা ভেঙেছে বা ক্ষয়ে গেছে তা ছবি তুলে বোঝা যায়। এক্স-রশ্মিও কিন্তু দীর্ঘ ব্যবহারে ক্যানসার সৃষ্টি করে। এই কারণেই গর্ভস্থ শিশুর এক্স-রে করা উচিত নয়। যেসব কর্মী এক্স-রশ্মি মেশিন চালনা করেন উপযুক্ত সাবধানতা না নিলে তাঁদের ক্যানসার হতে দেখা যায়।
জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় আলোর ভূমিকা
টুকুন উঠোনের পাশে টবের মাটিতে কয়েকটা বীজ ফেলেছিল। দিন কয়েক পর লক্ষ করল বীজ থেকে একটা ছোটো চারা বেরিয়েছে। আর ক্রমশ ওই চারার ডগার দিকটা অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জায়গা থেকে আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে (ছবিতে লক্ষ করো আলো বামদিক থেকে আসছে আর গাছ সেদিকে বেঁকে যাচ্ছে)।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
আলো ছাড়া গাছের খাদ্য তৈরি করা সম্ভব নয়। অন্ধকারে উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না। ইটের নীচে বেশ কয়েকদিন চাপা পড়লে ঘাসগুলোর রং পরিবর্তন হয়। বেশিদিন চাপা পড়ে থাকলে মরেও যায়। উদ্ভিদের সবুজ অঙ্গগুলো আলোকশক্তি শোষণ করে তাকে খাদ্যের শক্তি পরিণত করে। তারপর ওই খাদ্য ভেঙে পাওয়া শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদের নানা অঙ্গে সাড়া জাগে।
কেমন এই সাড়া এসো দেখা যাক। বিভিন্ন দেশে শীত ও গরমকালে দিনের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য ঘটে। এজন্য গরমকাল আর শীতকালে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ফোটে। গরমকালে ফোটে এমন কয়েকটি ফুলের নাম লেখো। শীতকালে ফোটে এমন কয়েকটি ফুলের নাম লেখো।
টুকরো কথা
গম, ভুট্টা, পালং ও মুলোগাছে দিনের দৈর্ঘ্য 12 ঘন্টার বেশি হলে তবে ফুল ফোটে। আবার চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, আখ ও আলুগাছে দিনের দৈর্ঘ্য 12 ঘন্টার কম হলে তবে ফুল ফোটে। আর টম্যাটো, সূর্যমুখী গাছের ফুল ফোটা দিনের দৈর্ঘ্যের কমা-বাড়ার ওপর নির্ভরশীল।
তোমার জানা দুটি করে গাছের নাম লেখো যাদের ফুল ফোটার জন্য
- 1. 12 ঘন্টার বেশি আলোর প্রয়োজন হয়।
- 2. 12 ঘন্টার কম আলোর প্রয়োজন হয়।
প্রাণীজগতেও আলোর নানা প্রভাব দেখা যায়। আলো কম পেলে স্যামন মাছের বাচ্চারা মরে যায়। সূর্যের আলো কম পেলে গিরগিটি, সাপ ও আরো কত প্রাণী (ছুঁচো, ভালুক, ব্যাং) শীতঘুমে চলে যায়। ডানদিকের নীচের ছবিতে এক ধরনের ব্যাং কীভাবে নিজের পুরো দেহকে লুকিয়ে ফেলেছে দেখো। গুহাবাসী অনেক প্রাণীকে আলোতে আনলে তাদের চামড়ায় রঙিন পদার্থ তৈরি হতে শুরু হয়। সূর্য যখন মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে তখন পঙ্গপালের চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কোনো প্রাণী খোলস ছাড়া বা চামড়ার নীচে ফ্যাট জমা হওয়ার প্রক্রিয়াও আলোর প্রভাবে ঘটে। পরিযায়ী পাখিদের খুব শীতের জায়গা থেকে অপেক্ষাকৃত গরম জায়গায় উড়ে যাওয়া সূর্যের আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে। জোনাকির মতো অনেক প্রাণী আবার আলো তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
এবার শিক্ষক/শিক্ষিকার সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে নীচের প্রভাবগুলির উদাহরণ তোমার চারপাশের পরিবেশের বিভিন্ন জীব থেকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করো। (মাছ, পিঁপড়ে, পাখি, আরশোলা, ব্যাং, কেঁচো বা তোমার পরিচিত প্রাণী।)
- আলোর প্রভাবে জীবের চলাফেরা।
- আলোর প্রভাবে জীবের ডিম পাড়া।
- আলোর প্রভাবে জীবের চোখের রং পরিবর্তিত হওয়া।
- আলোর প্রভাবে জীবের চামড়ার রং বদলে যাওয়া।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
চুম্বক
চুম্বকের বিভিন্ন ধর্ম
হাতেকলমে-1
উপকরণঃ একটা ইরেজার, একটা লোহার পেরেক, একটা প্লাস্টিকের স্কেল, একটা কাঠ পেনসিল, একটা পেনসিল কম্পাস, একটা এক টাকার কয়েন, একটা গাছের পাতা, একটা স্টেইনলেস স্টিলের চামচ, একটা ব্লেড, একটা কাচের গ্লাস ও একটা চুম্বক।
একটা কাঠের টেবিলের উপরে সবকটা উপকরণ রাখো। শুধু দণ্ড দণ্ড চুম্বক: দণ্ড চুম্বক হলো একটা চুম্বকটা তোমার হাতে নাও। এবার দণ্ড চুম্বকটাকে টেবিলের উপর রাখা আয়তঘনাকার চুম্বকিত ইস্পাতের দন্ড। প্রতিটি জিনিসের কাছে নিয়ে যাও। এই চুম্বক এক প্রকার কৃত্রিম চুম্বক।
খেয়াল করো, চুম্বকটা কোন কোন জিনিসকে আকর্ষণ করছে, আর কোন কোন জিনিসকে আকর্ষণ করছে না। এরপর নীচের সারণিটাকে পূরণ করো।
নাম | উপযুক্ত স্থানে'√' চিহ্ন দাও | জিনিসগুলো যে উপাদানে তৈরি সেই উপাদানের নাম |
|
---|---|---|---|
চুম্বক আকর্ষণ করছে | চুম্বক আকর্ষণ করছে না | ||
ইরেজার | |||
লোহার পেরেক | |||
প্লাস্টিক স্কেল | |||
কাঠ পেনসিল | |||
পেনসিল কম্পাস | |||
টাকার কয়েন | |||
গাছের পাতা | |||
স্টিলের চামচ | |||
ব্লেড | |||
কাচের গ্লাস |
ভৌত পরিবেশ
চুম্বক যে যে পদার্থকে আকর্ষণ করে তাদের 'চৌম্বক পদার্থ' বলে। এদের বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করা যায়। যেমন: লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, কোনো কোনো ধরনের ইস্পাত ইত্যাদি। যে যে পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করতে পারে না তাদের 'অচৌম্বক পদার্থ' বলে। যেমন: প্লাস্টিক, রবার, কাঠ, কাগজ ইত্যাদি।
একটা গল্প আছে। প্রায় 2500 বছর আগে ম্যাগনেস (Magnes) নামে এক মেষপালক পাহাড়ের কোলে এক তৃণভূমিতে মেষ পালন করছিল। হঠাৎ তার পায়ের জুতোয় একটা টান অনুভব করল। আসলে জুতোয় ছিল লোহার পেরেক। পেরেকটাকে একটা পাথর আকর্ষণ করার ফলেই ঘটনাটা ঘটেছিল। পরে জানা গেল, পাথরটা সব লোহাকেই আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। ম্যাগনেসিয়া নামক অঞ্চলে এরকম প্রচুর পাথরের সন্ধান পাওয়া যায়। চুম্বকের ইংরাজি নাম ম্যাগনেট (Magnet) হওয়ার এটাই কারণ। এই পাথরের নাম হলো 'ম্যাগনেটাইট'। একে 'প্রাকৃতিক চুম্বক' বলে।
তাহলে জানা গেল, চুম্বক দুরকমের।
চুম্বক
প্রাকৃতিক চুম্বক বা ম্যাগনেটাইট
এই চুম্বক প্রকৃতিতে পাওয়া যায় বলে একে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। এই চুম্বক সহজে বাজারে কিনতে পাবে না। যেসব জায়গায় এই খনিজ দ্রব্যের খনি আছে সেখানেই শুধু এই পাথর পাওয়া সম্ভব।
কৃত্রিম চুম্বক
চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করে এই চুম্বক তৈরি করা হয়।
হাতেকলমে 2
একটা দণ্ড চুম্বক নাও। মেঝের উপর চক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটা সরলরেখাংশ আঁকো। এবার ওই রেখাংশের উত্তর প্রান্তে N ও দক্ষিণ প্রান্তে S লেখো। এবার ছবির মতো করে SN রেখা বরাবর দণ্ড চুম্বকটাকে সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে দাও। কাছাকাছি অন্য কোনো চুম্বক বা তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে এমন বস্তু যেন না থাকে।
এবার চুম্বকটাকে একটু নাড়িয়ে ছেড়ে দাও। অবশেষে চুম্বক যখন সাম্যাবস্থায় এল- তুমি কী দেখতে পেলে?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
চুম্বকটা কি উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে রয়েছে? চুম্বকটাকে আবার একটু নাড়িয়ে সাম্য অবস্থায় আসতে দাও। এবার কী দেখতে পাচ্ছ? প্রতিবারই কি চুম্বকটা উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে?
তাহলে জানা গেল, চুম্বককে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারবে এমনভাবে ঝুলিয়ে দিলে তা সর্বদা 'উত্তর-দক্ষিণ' মুখ করে থাকে।
এবার ওই চুম্বকটাকে একটা থার্মোকলের টুকরোর উপর বসাও এবং থার্মোকলের টুকরোটা একটা প্লাস্টিকের জলভরা পাত্রে ভাসিয়ে দাও। জল স্থির হলে এবং চুম্বকসহ থার্মোকল সাম্য অবস্থায় এলে, চুম্বক কোন দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে লক্ষ করো।
এবার চুম্বকসহ থার্মোকলকে আস্তে করে ঘুরিয়ে দিয়ে ছেড়ে দাও। সাম্য অবস্থায় এলে লক্ষ করো চুম্বকটা কোন দিকে মুখ করে আছে।
স্বাধীনভাবে ভাসমান বা ঝুলন্ত চুম্বকের এই উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে থাকার ধর্মকে চুম্বকের দিক-নির্দেশক ধর্ম বলে।
চুম্বক সংক্রান্ত নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য এক ধরনের খুব দরকারি চুম্বক পাওয়া যায়। এধরনের চুম্বককে 'চুম্বক শলাকা' বলে। চুম্বক শলাকা হলো আসলে একটা ছোট্ট হালকা চুম্বকিত ইস্পাতের পাত। দু-প্রান্ত সুঁচালো এই চুম্বক একটা খাড়া দণ্ডের ওপর মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তা ছোট্ট কাচের বাক্সের মধ্যে রাখা থাকে। এই চুম্বক নানা মাপেও পাওয়া যায়।
হাতেকলমে 3
একটা লম্বা দণ্ড চুম্বক, কিছুটা লোহাচুর, একটা সাদা কাগজ নাও।
কাঠের টেবিলের উপর সাদা কাগজটা পাতো। এবার লোহাচুরগুলো সাদা কাগজের ওপর রাখো।
এখন চুম্বকটার সারা গায়ে লোহাচুরগুলো মাখাতে চেষ্টা করো।
এবার নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
- লোহাচুরগুলো কী চুম্বকের সব জায়গায় সমানভাবে আটকাচ্ছে?
- চুম্বকের কোন জায়গায় লোহাচুর সবচেয়ে বেশি আটকেছে?
- চুম্বকের কোন জায়গায় লোহাচুর সবচাইতে কম আটকেছে?
ভৌত পরিবেশ
উপরের পর্যবেক্ষণ থেকে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা কোথায় সবচেয়ে বেশি বলে তোমার মনে হয়? চুম্বকের কোন জায়গায় আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে কম বলে তোমার মনে হয়?
জেনে রাখা দরকার
চুম্বকের দুই প্রান্তে যে দুই অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি, সেই দুই অঞ্চলকে চুম্বকের 'মেরু' বলে। এই মেরু দুটিকে দুটি বিন্দু হিসেবে ভাবা যেতে পারে। চুম্বকের ঠিক মাঝখানে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। ওই অঞ্চলকে চুম্বকের উদাসীন অঞ্চল বলে।
হাতেকলমে 4
একটা দণ্ড চুম্বক, দুটো চুম্বক শলাকা, একটা পেনসিল ও একটা সাদা কাগজ নাও। সাদা কাগজটা একটা টেবিলের উপর আটকে দাও। এবার দণ্ড চুম্বকটা কাগজের উপর রাখো। এরপর দণ্ড চুম্বকের N-মেরুর দুই কোণ বরাবর ছবির মতো করে চুম্বক শলাকা দুটি রাখো।
এখন পেনসিল দিয়ে দণ্ড চুম্বকটির ধার ঘেঁষে দাগ কাটো। তারপর চুম্বক শলাকাদুটোর দুই প্রান্তবিন্দুর অবস্থান পেনসিল দিয়ে সাদা কাগজটায় বিন্দু এঁকে চিহ্নিত করো। বিন্দুগুলিকে A,B ও C,D নাম দাও।
এবার BA ও DC যুক্ত করে বাড়িয়ে দাও। ওই সরল রেখাংশ দুটো যে বিন্দুতে (N) ছেদ করল, সেই বিন্দুটাই জ্যামিতিক ভাবে দণ্ড চুম্বকের উত্তর মেরুর অবস্থান।
এরকম করে তুমি চুম্বকটার দক্ষিণ মেরুর অবস্থান নির্ণয় করো। চুম্বকের মেরুবিন্দু দুটি আসলে চুম্বকের দুই প্রান্তদেশের কাছাকাছি চুম্বকের ভেতরে অবস্থান করে।
চুম্বকের এই দুই মেরুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে চৌম্বক দূরত্ব বলে। এই দৈর্ঘ্য চুম্বকের জ্যামিতিক দৈর্ঘ্যের 0.86 গুণ। অর্থাৎ চৌম্বক দৈর্ঘ্য = চুম্বকটির জ্যামিতিক দৈর্ঘ্য $\times0.86$।
অবাধে ঝুলন্ত বা ভাসমান অবস্থায় চুম্বকের যে মেরু মোটামুটি উত্তর দিকে মুখ করে থাকে তাকে উত্তর সন্ধানী মেরু বা উত্তর মেরু (N) বলে। আর যে মেরু মোটামুটি দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকে তাকে দক্ষিণ সন্ধানী মেরু বা দক্ষিণ মেরু (S) বলে। চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু যোগ করলে যে সরলরেখাংশ (NS) পাওয়া যায় তাকে চৌম্বক অক্ষ বলে। একটা চুম্বকের চারধারে যে স্থান জুড়ে ওই চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ধর্ম কাজ করে তাকে ওই চুম্বকের চৌম্বক ক্ষেত্র বলে।
হাতেকলমে 5
ছবির মতো করে বা অন্য কোনোভাবে সুতো দিয়ে একটা দণ্ড চুম্বককে ঝুলিয়ে দাও। খেয়াল রাখো যেন আশেপাশে কোনো চৌম্বক পদার্থ বা চুম্বক না থাকে।
চুম্বকটাকে সাম্য অবস্থায় আসতে দাও। এবার অন্য একটা দণ্ড চুম্বকের উত্তর মেরু (N) ঝুলন্ত চুম্বকের উত্তর মেরুর (N) এর কাছে নিয়ে যাও। কী দেখতে পেলে? ঝুলন্ত চুম্বকের উত্তর মেরু সরে গেল কেন?
তাহলে কী ঝুলন্ত চুম্বকের উত্তর মেরুর উপর কেউ 'বল' প্রয়োগ করেছে? এই বল কোথা থেকে প্রযুক্ত হলো?
ভৌত পরিবেশ
কাছাকাছি দ্বিতীয় চুম্বকের উত্তর মেরু ছাড়া আর তো কিছু ছিল না। তবে কি দ্বিতীয় চুম্বকের উত্তর মেরুই এই বল প্রয়োগ করেছে?
তাহলে বোঝা গেল, একটা চুম্বকের উত্তর মেরু অপর চুম্বকের উত্তর মেরুকে বিকর্ষণ করে।
এবার সাম্য অবস্থায় চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর (S) কাছে হাতের চুম্বকের দক্ষিণ (S) মেরুটাকে ধরো।
এক্ষেত্রে কী দেখতে পেলে? এ থেকে তুমি কী সিদ্ধান্তে আসতে পারো?
অতএব বোঝা গেল চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। অর্থাৎ S-মেরু, S-মেরুকে এবং N-মেরু, N মেরুকে বিকর্ষণ করে।
এবার ঝুলন্ত চুম্বকের N মেরুর কাছে, দ্বিতীয় চুম্বকের S-মেরু নিয়ে যাও। কী দেখতে পাচ্ছ? ঝুলন্ত চুম্বকের S মেরু তোমার হাতের চুম্বকের N মেরুর কাছে সরে এল কেন? এই দুই বিপরীত মেরুর (N ও S) মধ্যে কোনো ধরনের বল কাজ করছে কি? (আকর্ষণ বল না বিকর্ষণ বল?)
এবার হাতের দণ্ড চুম্বকের N মেরু সাম্য অবস্থায় ঝুলন্ত দণ্ড চুম্বকের S মেরুর কাছে ধরো। এখন কী দেখতে পেলে? এবারেও কি পরস্পর দুই বিপরীত মেরু (N ও S) পরস্পরকে আকর্ষণ করল?
অতএব জানা গেল চুম্বকের বিপরীত মেরু ($N \text{ ও } S$) পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
ঝুলন্ত চুম্বকটির কাছে অন্য চুম্বকের বিপরীত মেরু নিয়ে আসায় আকর্ষণ হলো। যদি কোনো একটি লোহার দণ্ড বা স্টিলের দণ্ড আনা হতো তাহলেও তো আকর্ষণই হতো। তাহলে আকর্ষণ হচ্ছে দেখে কি জোর দিয়ে বলা যাবে যে দ্বিতীয় বস্তুটিও চুম্বক? এবার ভেবে দেখো যদি বিকর্ষণ হতো তাহলে দ্বিতীয় বস্তুটির বিষয়ে তুমি কী বলতে? চুম্বক, না লোহা বা স্টিলের দণ্ড?
কোনো বস্তু চুম্বক কিনা তা জানতে আকর্ষণ, না বিকর্ষণ কোনটি বেশি নির্ভরযোগ্য বলে তোমার মনে হয়?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় চৌম্বক ক্ষেত্রের ভূমিকা
জীবজগৎকে ধরে রেখেছে যে পৃথিবী সে নিজেই একটা বিশাল চুম্বক। কোনো কোনো জীবের ওপর চৌম্বক শক্তির প্রভাব বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন। অনেক জীবের ক্ষেত্রে এখনও এর প্রভাব আমাদের অজানা থেকে গেছে।
ভুচুম্বকের বলরেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা পরিযায়ী পাখিদের কথা জানি। পরিযায়ী কিছু কচ্ছপও আছে। তারা পৃথিবীর চৌম্বক বলরেখা অনুসরণ করে আদি বাসভূমি থেকে শীতে পাড়ি দেয় এমন কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে যেখানে গরম তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার শীতের শেষে ওইভাবেই উৎসে ফিরে আসে।
মহাবিশ্ব থেকে এক ধরনের রশ্মি- মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic ray) ক্রমাগত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এদের অধিকাংশই হলো তড়িৎযুক্ত কণিকা। ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে এদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। ফলে মেরু অঞ্চল ঘিরে দুটি বিকিরণ বলয় (ভ্যান-অ্যালেন বিকিরণ বলয়) তৈরি হয় এবং উৎপন্ন হয় মেরু জ্যোতি বা অরোরা। এই জ্যোতি ওই অঞ্চলের জীবজগতের কাজে লাগে।
কী করে একটি প্রাণী সরাসরি এই চৌম্বক ক্ষেত্রকে চিনতে পারে? ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
পায়রার খুলি ও মস্তিষ্কের মাঝে একটা খুব ছোটো কালো গঠন আছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটাইট নামে এক ধরনের চৌম্বকীয় বস্তু আছে। ঘরে ফেরা পায়রারা মেঘলা অন্ধকার দিনে কোনো পরিচিত চিহ্ন না দেখতে পেলেও ঠিকঠাক ঘরে ফিরে আসে। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ওড়ার পর তারা সঠিক দিকে চলতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, এদের মাথায় এক টুকরো চুম্বক লাগিয়ে দিলে চলার দিক পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো শামুক, মৌমাছিদের মধ্যেও ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
তড়িৎ-চুম্বক
একটা লোহার দন্ড, একটা লম্বা অন্তরিত (প্লাস্টিকের আস্তরণ দেওয়া) তামার তার, একটা সুইচ, একটা শক্তিশালী ব্যাটারি আর একটা চুম্বক শলাকা নাও। লোহার উপর অন্তরিত তামার তার জড়িয়ে নাও। তারের দুই প্রান্ত ব্যাটারির ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তে সুইচসহ ছবির মতো করে যোগ করো। শলাকাটিকে তার জড়ানো লোহার দণ্ডের সামনে এনে সুইচ অন করো। বোঝার চেষ্টা করো শলাকার কাছাকাছি থাকা প্রান্তটিতে কোন ধরনের মেরুর সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত তারের প্রান্তদুটোকে উলটে দাও। এবার সুইচ অন করে আবার দেখো, শলাকাটির কোন মেরু দণ্ডটির কোন প্রান্ত দ্বারা আকর্ষিত বা বিকর্ষিত হচ্ছে। চুম্বক শলাকার বিক্ষেপ ঘটল কেন? চুম্বক শলাকার মেরুতে কে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল প্রয়োগ করল? এবার সুইচ অফ করে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করে দাও। চুম্বক শলাকা আবার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এল কেন? তাহলে কি তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে লোহার দণ্ড চুম্বকে পরিণত হয়েছিল? এই ধরনের চুম্বককে তড়িৎ-চুম্বক বলে।
চুম্বক ও তড়িৎ-চুম্বকের ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চুম্বকের নানাবিধ ব্যবহার আছে। তার কয়েকটা নীচে দেওয়া হলো।
- সমুদ্রবক্ষে দিক নির্দেশের জন্য নাবিকরা 'নৌকম্পাস' ব্যবহার করেন। এতে একটা সূক্ষ্মাগ্র ধাতবদণ্ডের উপর একটা চুম্বক শলাকা বসানো থাকে।
- অডিয়ো বা ভিডিয়ো ক্যাসেটের মধ্যে যে প্লাস্টিকের টেপ থাকে তার উপর চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে।
- A.T.M.(AUTOMATED TELLER MACHINE) কার্ডে ও ক্রেডিট কার্ডে চুম্বকিত স্ট্রিপ (Magnetic strip) -এর ব্যবহার হয়।
- কমপিউটারের হার্ডডিস্কে (Hard disk) প্লাস্টিকের চাকতির উপর চুম্বকিত পদার্থের কোটিং বা আস্তরণ থাকে।
- বিভিন্ন খেলনাতে চুম্বকের ব্যবহার দেখা যায়।
- চোখের ভিতর থেকে লোহার সূক্ষ্ম চূর্ণ বার করতে ডাক্তাররা এক বিশেষ তড়িৎ চুম্বক যন্ত্র ব্যবহার করেন।
- লাউড স্পিকারে চুম্বকের ব্যবহার আছে।
- সাইকেলের ডায়নামোতে চুম্বকের ব্যবহার হয়।
নৌকম্পাস
অডিয়ো ক্যাসেট
কমপিউটারের হার্ডডিস্ক
কলিংবেল
ইলেকট্রিক মিটারে চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
ফ্রিজের দরজায় চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রিক কলিংবেলে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রিক মোটরে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
চুম্বক ব্যবহৃত হয়েছে এমন জিনিস খুব সাবধানে ব্যবহার করা দরকার।
চুম্বক ব্যবহৃত হয়েছে এমন কোনো বস্তু কোনোভাবেই যেন খুব বেশি উত্তপ্ত না হয়। তাপের প্রভাবে চুম্বকের চুম্বকত্ব বিনষ্ট হতে পারে। দুটি ATM কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের যেদিকে চুম্বক স্ট্রিপ আছে সেই দিক মুখোমুখি একসঙ্গে যেন না থাকে।
লাউড স্পিকার, টি.ভি, রেডিয়ো, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ইত্যাদির কাছে যেন কোনো শক্তিশালী চুম্বক না থাকে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় চৌম্বক ক্ষেত্রের ভূমিকা
জীবজগৎকে ধরে রেখেছে যে পৃথিবী সে নিজেই একটা বিশাল চুম্বক। কোনো কোনো জীবের ওপর চৌম্বক শক্তির প্রভাব বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন। অনেক জীবের ক্ষেত্রে এখনও এর প্রভাব আমাদের অজানা থেকে গেছে।
ভুচুম্বকের বলরেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা পরিযায়ী পাখিদের কথা জানি। পরিযায়ী কিছু কচ্ছপও আছে। তারা পৃথিবীর চৌম্বক বলরেখা অনুসরণ করে আদি বাসভূমি থেকে শীতে পাড়ি দেয় এমন কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে যেখানে গরম তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার শীতের শেষে ওইভাবেই উৎসে ফিরে আসে।
মহাবিশ্ব থেকে এক ধরনের রশ্মি- মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic ray) ক্রমাগত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এদের অধিকাংশই হলো তড়িৎযুক্ত কণিকা। ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে এদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। ফলে মেরু অঞ্চল ঘিরে দুটি বিকিরণ বলয় (ভ্যান-অ্যালেন বিকিরণ বলয়) তৈরি হয় এবং উৎপন্ন হয় মেরু জ্যোতি বা অরোরা। এই জ্যোতি ওই অঞ্চলের জীবজগতের কাজে লাগে।
কী করে একটি প্রাণী সরাসরি এই চৌম্বক ক্ষেত্রকে চিনতে পারে? ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
পায়রার খুলি ও মস্তিষ্কের মাঝে একটা খুব ছোটো কালো গঠন আছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটাইট নামে এক ধরনের চৌম্বকীয় বস্তু আছে। ঘরে ফেরা পায়রারা মেঘলা অন্ধকার দিনে কোনো পরিচিত চিহ্ন না দেখতে পেলেও ঠিকঠাক ঘরে ফিরে আসে। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ওড়ার পর তারা সঠিক দিকে চলতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, এদের মাথায় এক টুকরো চুম্বক লাগিয়ে দিলে চলার দিক পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো শামুক, মৌমাছিদের মধ্যেও ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় চৌম্বক ক্ষেত্রের ভূমিকা
জীবজগৎকে ধরে রেখেছে যে পৃথিবী সে নিজেই একটা বিশাল চুম্বক। কোনো কোনো জীবের ওপর চৌম্বক শক্তির প্রভাব বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন। অনেক জীবের ক্ষেত্রে এখনও এর প্রভাব আমাদের অজানা থেকে গেছে।
ভুচুম্বকের বলরেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা পরিযায়ী পাখিদের কথা জানি। পরিযায়ী কিছু কচ্ছপও আছে। তারা পৃথিবীর চৌম্বক বলরেখা অনুসরণ করে আদি বাসভূমি থেকে শীতে পাড়ি দেয় এমন কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে যেখানে গরম তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার শীতের শেষে ওইভাবেই উৎসে ফিরে আসে।
মহাবিশ্ব থেকে এক ধরনের রশ্মি- মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic ray) ক্রমাগত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এদের অধিকাংশই হলো তড়িৎযুক্ত কণিকা। ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে এদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। ফলে মেরু অঞ্চল ঘিরে দুটি বিকিরণ বলয় (ভ্যান-অ্যালেন বিকিরণ বলয়) তৈরি হয় এবং উৎপন্ন হয় মেরু জ্যোতি বা অরোরা। এই জ্যোতি ওই অঞ্চলের জীবজগতের কাজে লাগে।
কী করে একটি প্রাণী সরাসরি এই চৌম্বক ক্ষেত্রকে চিনতে পারে? ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
পায়রার খুলি ও মস্তিষ্কের মাঝে একটা খুব ছোটো কালো গঠন আছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটাইট নামে এক ধরনের চৌম্বকীয় বস্তু আছে। ঘরে ফেরা পায়রারা মেঘলা অন্ধকার দিনে কোনো পরিচিত চিহ্ন না দেখতে পেলেও ঠিকঠাক ঘরে ফিরে আসে। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ওড়ার পর তারা সঠিক দিকে চলতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, এদের মাথায় এক টুকরো চুম্বক লাগিয়ে দিলে চলার দিক পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো শামুক, মৌমাছিদের মধ্যেও ম্যাগনেটাইটের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
ভৌত পরিবেশ
তড়িৎ
তড়িৎপ্রবাহ
তড়িৎ-এর সাহায্যে চলে এমন কয়েকটা জিনিসের নাম লেখো।
ধরো, রাত্রিবেলায় লোডশেডিং হয়েছে, অথবা অন্য কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক আলো পেতে মানুষ কী কী ব্যবহার করে? তোমরা সবাই টর্চ দেখেছ। অন্ধকারে টর্চের আলোয় আমরা পথ চলি। টর্চের ভিতরে কী থাকে তা কি কখনও দেখেছ?
ব্যাটারি
নির্জল কোশ/সেল
টর্চের ভিতর তোমরা যাকে ব্যাটারি বলে জানো তা হলো Dry cell বা নির্জল কোশ। চলতি কথায় একে শুধু, সেল (cell)- ই বলে। একাধিক সেল-এর সমবায়ে তৈরি হয় ব্যাটারি।
'সেল' ছাড়া টর্চ জ্বলে না। আবার 'সেল' যুক্ত করলেই টর্চ জ্বালালে জ্বলে। তাহলে, টর্চের বৈদ্যুতিক বালব জ্বালার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় 'সেল'।
জেনে রাখা দরকার
টর্চের সেলের ভিতরে থাকে রাসায়নিক পদার্থ। এই রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপ বদল করে। এই সেলকে বলে 'প্রাইমারি সেল' বা 'ডিসপোজেবল সেল'।
একটা সেল নাও। খুব ভালো করে সেলটাকে লক্ষ করো। এবার দেখো '+' চিহ্ন কোথায় আছে? যে প্রান্তে '+' চিহ্ন আছে তার উলটো প্রান্তে কী চিহ্ন আছে? এবার দেখো সেলের কোন প্রান্তে একটা ধাতুর তৈরি টুপি রয়েছে? '+' চিহ্ন দেওয়া প্রান্তে, না '-' চিহ্ন যুক্ত প্রান্তে?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
দেখো তো সেলটির অপর প্রান্তে কী আছে?
দেখা গেল, একটা 'সেলের' দুটি প্রান্ত, 'ধাতব টুপি' প্রান্ত বা '+' চিহ্নিত প্রান্ত, 'ধাতব চাকতি' প্রান্ত বা '-' চিহ্নিত প্রান্ত।
জেনে রাখা ভালো
বাজারে আরো অনেক রকমের সেল আছে।
- ইলেকট্রনিক হাতঘড়িতে যে 'সেল' থাকে তা দেখতে অনেকটা বোতামের মতো। একে বোতাম সেল (Button Cell) বলে।
- গাড়ির শক্তিশালী ব্যাটারিতে থাকে ছটা বা তার বেশি সেল। এই ধরনের সেলকে 'সেকেন্ডারি সেল' বলে।
বাড়ির বড়োদের সাহায্যে টর্চের বালবটাকে বার করো। ভালো করে লক্ষ করো।
টর্চের সুইচ অন করলে বালবের ভিতরে যে অংশটা জ্বলে ওঠে তাকে বলে ফিলামেন্ট। ফিলামেন্ট, দুটো মোটা ধাতব তারের মাঝে থাকে। ওই তার দুটোর একটা সেলের ধনাত্মক প্রান্তে (+ চিহ্নিত প্রান্তে) এবং অপরটি সেলের ঋণাত্মক প্রান্তে (- চিহ্নিত প্রান্তে) যুক্ত থাকে।
হাতেকলমে 1
একটা টর্চের বালব, এক বা একাধিক সেল, বিভিন্ন রঙের পাঁচটা প্লাস্টিক আবরণযুক্ত পরিবাহী তার, ব্ল্যাক টেপ ও রাবার ব্যান্ড (গার্টার) জোগাড় করো। প্রতিটি তারের দু-প্রান্তে খানিকটা প্লাস্টিক আবরণ (প্লাস্টিক কোটিং) ছাড়িয়ে নিয়ে ধাতব অংশ বার করে রাখো। সেলের দু-প্রান্তে একটা করে তার যুক্ত করো। বালবটার দু-প্রান্তে একটা করে তার যুক্ত করো। এবার পরের পৃষ্ঠার ছবিতে, যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেইরকম বিভিন্নভাবে তারগুলো যুক্ত করো। দেখো কোন ক্ষেত্রে আলো জ্বলছে। (ছবির নীচে দেওয়া লেখা থেকে ঠিক উত্তরটি বেছে নাও)
দেখো তো সেলটির অপর প্রান্তে কী আছে?
দেখা গেল, একটা 'সেলের' দুটি প্রান্ত, 'ধাতব টুপি' প্রান্ত বা '+' চিহ্নিত প্রান্ত, 'ধাতব চাকতি' প্রান্ত বা '-' চিহ্নিত প্রান্ত।
জেনে রাখা ভালো
বাজারে আরো অনেক রকমের সেল আছে।
- ইলেকট্রনিক হাতঘড়িতে যে 'সেল' থাকে তা দেখতে অনেকটা বোতামের মতো। একে বোতাম সেল (Button Cell) বলে।
- গাড়ির শক্তিশালী ব্যাটারিতে থাকে ছটা বা তার বেশি সেল। এই ধরনের সেলকে 'সেকেন্ডারি সেল' বলে।
বাড়ির বড়োদের সাহায্যে টর্চের বালবটাকে বার করো। ভালো করে লক্ষ করো।
টর্চের সুইচ অন করলে বালবের ভিতরে যে অংশটা জ্বলে ওঠে তাকে বলে ফিলামেন্ট। ফিলামেন্ট, দুটো মোটা ধাতব তারের মাঝে থাকে। ওই তার দুটোর একটা সেলের ধনাত্মক প্রান্তে (+ চিহ্নিত প্রান্তে) এবং অপরটি সেলের ঋণাত্মক প্রান্তে (- চিহ্নিত প্রান্তে) যুক্ত থাকে।
হাতেকলমে 1
একটা টর্চের বালব, এক বা একাধিক সেল, বিভিন্ন রঙের পাঁচটা প্লাস্টিক আবরণযুক্ত পরিবাহী তার, ব্ল্যাক টেপ ও রাবার ব্যান্ড (গার্টার) জোগাড় করো। প্রতিটি তারের দু-প্রান্তে খানিকটা প্লাস্টিক আবরণ (প্লাস্টিক কোটিং) ছাড়িয়ে নিয়ে ধাতব অংশ বার করে রাখো। সেলের দু-প্রান্তে একটা করে তার যুক্ত করো। বালবটার দু-প্রান্তে একটা করে তার যুক্ত করো। এবার পরের পৃষ্ঠার ছবিতে, যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেইরকম বিভিন্নভাবে তারগুলো যুক্ত করো। দেখো কোন ক্ষেত্রে আলো জ্বলছে। (ছবির নীচে দেওয়া লেখা থেকে ঠিক উত্তরটি বেছে নাও)
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
A
B
C
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
D
E
F
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
- আলো জ্বলছে/আলো জ্বলছে না
হাতেকলমে 2
এবার দুটো সেল পাশাপাশি বসিয়ে নিয়ে বালবটা জ্বালাও। কী দেখলে?
বালবটার আলো আরও বেশি জোরালো হলো কি?
বোঝা গেল যে একটার বদলে দুটো সেল পাশাপাশি বসালে তড়িৎশক্তির পরিমাণ বাড়ে। 'হাতেকলমে 1' -এর পরীক্ষায় দুটি ক্ষেত্রে আলো জ্বলেছে (B ও F)। এই দুই ক্ষেত্রেই বালবের দুই প্রান্তের সঙ্গে সেলের দুই প্রান্ত যুক্ত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় সার্কিট বা বর্তনী।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
বর্তনী আঁকার জন্য কয়েকটি প্রতীক নীচের সারণিতে দেওয়া হলো।
+ | সেল |
|
বড়োদাগটা ( ) '+' প্রান্ত বোঝায় ছোটোদাগটা (।) '-' প্রান্ত বোঝায় |
+ | ব্যাটারি (দুই সেলের) |
|
X |
off | সুইচ |
|
সুইচ 'অফ' অবস্থা |
on | সুইচ |
|
সুইচ 'অন' অবস্থা |
তার |
|
X | |
বালব |
|
X |
হাতেকলমে 3
ছবির মতো করে একটা বর্তনী তৈরি করো। বালবটা কি জ্বলছে? যদি বালবটা জ্বলে তবে বর্তনী ঠিক আছে। এবার একটা স্কেচ পেন নাও। সেলের '+' প্রান্ত থেকে তার বরাবর স্কেচ পেন দিয়ে বালব অবধি দাগ দাও। সেল থেকে তড়িৎ তোমার পেনের দাগ বরাবর তারের মধ্যে দিয়ে বালবের এক প্রান্তে পৌঁছোয়। বালবটা যেহেতু জ্বলছে, তাই তড়িৎ বালবের ভিতরের তার আর ফিলামেন্ট ধরে বালবের অপর প্রান্তে এসে পৌঁছোয়।
এবার বালবের অপর প্রান্ত থেকে শুরু করে তার বরাবর সেলের '-' প্রান্ত অবধি স্কেচ পেন দিয়ে দাগ দাও।
এবার প্রতীকের সাহায্যে বর্তনীটি পাশে আঁকা হলো। ভালোভাবে বর্তনীটি লক্ষ করো। আগের পৃষ্ঠার সারণিতে দেওয়া প্রতীকের সাহায্যে কীভাবে পাশের বর্তনীটি আঁকা হয়েছে তা নিশ্চয়ই বুঝেছ।
এবার নীচের বাঁ দিকের ছবি দেখে তার বর্তনীটি ডানদিকে আঁকো।
নীচের ছবিগুলি খুঁটিয়ে দেখো ও ছবির সঙ্গে যুক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
আলো কি জ্বলবে?
আলো কি জ্বলবে?
আলো কি জ্বলবে?
আলো কি জ্বলবে?
আলো কি জ্বলবে?
আলো কি জ্বলবে?
বর্তনী কোথাও ছিন্ন হয়ে গেলে, তার মধ্যে দিয়ে তড়িৎ চলাচলে বাধা পড়ে। তখন বর্তনী কাজ করে না। তখন ওই বর্তনীকে মুক্ত বর্তনী বলে। আর যদি বর্তনী কোথাও ছিন্ন না হয় তখন ওই বর্তনীকে বদ্ধ বর্তনী বলে।
হাতেকলমে 4
একটা থার্মোকলের টুকরো বা কাঠের টুকরো, একটা সেফটিপিন, আর দুটো বোর্ডপিন নাও। নীচের ছবির মতো ব্যবস্থা করো। দুটো পিনের দূরত্ব এমন হবে, যাতে দ্বিতীয় পিনে গাঁথা সেফটিপিনকে ঘুরিয়ে প্রথম পিনে স্পর্শ করা যায়।
২ নং বোর্ড পিন
১ নং বোর্ড পিন
সেফটিপিন
থার্মোকল বা
কাঠের টুকরো
ব্যাস, তুমি বানিয়ে ফেলেছ একটা সুইচ।
একটা বালব, তিনটে তার, আর একটা সেল নাও। এবার পাশের বর্তনীটি তৈরি করো।
সেফটিপিনটা ছবিতে যেমন দেখানো আছে তেমনভাবে রয়েছে। বালবটা কি জ্বলবে? এবার সেফটিপিনটা ঘুরিয়ে প্রথম পিনে স্পর্শ করা হলো। বালবটা কি জ্বলবে? তোমার বাড়িতে যে সব ইলেকট্রিকের সরঞ্জামের মধ্যে সুইচ আছে তার মধ্যে প্রায় সব সুইচই এই নীতিতে কাজ করে।
হাতেকলমে 5
একটা সেল, একটা টর্চের বালব, আর তিনটে তার নাও। তারগুলোর দুই প্রান্তে প্লাস্টিক ছাড়িয়ে কিছুটা ধাতব তার বার করে রাখো। এবার পরের পৃষ্ঠার ছবির মতো করে তার, সেল ও বালব লাগাও। ব্যাস, তৈরি হলো তোমার বর্তনী পরীক্ষক বা টেস্টার।
এখন, একটা কাঠের ও একটা প্লাস্টিকের স্কেল, একটা লোহার পেরেক, একটা সুতির কাপড়ের টুকরো, একটা স্টিলের চামচ, একটা চাবি, একটা কাগজের টুকরো, চিনে মাটির একটা কাপ নাও। এবার তোমার তৈরি টেস্টারটা নাও। উপরের প্রতিটি জিনিসের দু-প্রান্তে তোমার টেস্টারের A ও B প্রান্ত স্পর্শ করো। লক্ষ করো, কোন ক্ষেত্রে বালবটি জ্বলছে।
যে যে ক্ষেত্রে বালব জ্বলছে, সেই বস্তুগুলোর মধ্য দিয়ে নিশ্চয়ই তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। এই বস্তুগুলোকে বলে 'তড়িতের সুপরিবাহী'।
যেসব ক্ষেত্রে বালব জ্বলছে না, সেই বস্তুগুলোর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে না। তাই এদের তড়িৎ-এর 'কুপরিবাহী' বা অন্তরক বলে।
বস্তুর নাম | আলো জ্বলছে বা জ্বলছে না |
এর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ যেতে পারে বা পারে না |
তড়িতের সুপরিবাহী বা কুপরিবাহী |
---|---|---|---|
কাঠের স্কেল | |||
প্লাস্টিকের স্কেল | |||
লোহার পেরেক | |||
সুতির কাপড় | |||
স্টিলের চামচ | |||
চাবি | |||
কাগজের টুকরো | |||
চিনেমাটির কাপ |
ভেবে বলো তো।
ইলেকট্রিকের তার প্লাস্টিকের ভেতর ঢাকা থাকে কেন? আবার, বর্তনী তৈরির সময় ওই প্লাস্টিকের আবরণ ছাড়িয়ে নিতে হয় কেন?
ইলেকট্রিক সরঞ্জামে চিনেমাটি বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় কেন? ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিরা যখন চালু লাইনে কাজ করেন তখন তাঁরা কাঠের আসবাবপত্রের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করেন কেন? মনে রেখো, প্লাস্টিক, চিনেমাটি, কাঠ প্রভৃতি তড়িৎ-এর কুপরিবাহী।
তড়িৎ প্রবাহের ফল
হাতেকলমে 6
একটা চুম্বক শলাকা নাও। চুম্বক শলাকাকে উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে সাম্য অবস্থায় আসতে দাও। এবার একটা শক্তিশালী ব্যাটারি, দু-টুকরো (একটা ছোটো ও একটা বড়ো) প্লাস্টিকের তার যাদের দু-প্রান্তে প্লাস্টিক ছাড়িয়ে ধাতব তারের কিছু অংশ বার করা আছে ও একটা সুইচ নাও। ছবির মতো করে বর্তনীটা তৈরি করো।
এবার, বড়ো তারটার দু-প্রান্ত হাত দিয়ে, চুম্বকশলাকার দুই সুঁচালো মুখ বরাবর চুম্বক শলাকার সামান্য একটু ওপরে টান টান করে ধরো। এবার বন্ধুকে বলো সুইচ অন করতে। সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গে, চুম্বকটার বিক্ষেপ হলো কেন? কাছাকাছি তো কোনো চুম্বক নেই। তাহলে ওই চুম্বককে বল প্রয়োগ করল কে? ভালো করে দেখো তো চুম্বকটা এখন কি আর উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে আছে? এবার সুইচ অফ করে দাও। কী দেখতে পেলে? চুম্বকটার আবার বিক্ষেপ হলো। আর সাম্যাবস্থায় এসে উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে দাঁড়াল।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
তোমরা দেখেছ, একটা চুম্বক শলাকার কাছে একটা দন্ড চুম্বক নিয়ে এলে, শলাকাটির বিক্ষেপ হয়, কারণ শলাকাটির ওপর একটি চৌম্বক বল ক্রিয়া করে। তাহলে ওপরের পরীক্ষায় চুম্বক শলাকার বিক্ষেপের জন্য যে চৌম্বক বল দায়ী তা এল কোথা থেকে? তড়িৎপ্রবাহের ফলে যে চৌম্বক বলের সৃষ্টি হয় ওপরের পরীক্ষা তার প্রমাণ। কারণ সুইচ অফ করার পর ওই বলের আর অস্তিত্ব থাকে না।
হাতেকলমে 7
একটা সেল, একটা বড়ো লোহার পেরেক, কয়েকটা ছোটো পেরেক, তোমার তৈরি একটা সুইচ বোর্ড ও চারটে তার নাও। ছবির মতো করে সার্কিট তৈরি করো।
সুইচ 'অন' করো। এবার বড়ো পেরেকটার কাছে ছোটো পেরেকগুলো ধরো। কী দেখলে বলো? ছোটো পেরেকগুলোকে বড়ো পেরেকটা আকর্ষণ করছে কেন?
এবার সুইচ 'অফ' করো। এবার বড়ো পেরেকটা কি আর ছোটো পেরেকগুলোকে আকর্ষণ করছে? সুইচ 'অন' করলে বড়ো পেরেকটা ছোটো পেরেকগুলোকে আকর্ষণ করছে। আবার অফ করলে তার আকর্ষণ ক্ষমতা চলে যাচ্ছে। তবে কি তড়িৎ প্রবাহই ওই পেরেকটাকে চুম্বকে পরিণত করেছে?
কোনো চৌম্বক পদার্থের (লোহা, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি) ওপর তার জড়িয়ে ওই তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পাঠালে ওই চৌম্বক পদার্থ চুম্বকে পরিণত হয়। এধরনের চুম্বককে তড়িৎ চুম্বক বলে। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করলে তা আর চুম্বক থাকে না।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
হাতেকলমে 8
হাতেকলমে 7-এর বর্তনীর (সার্কিটের) সুইচ 'অন' করো। দেখো সবচেয়ে বেশি কটা ছোটো পেরেককে বড়ো পেরেকটা আকর্ষণ করতে পারছে। ছোটো পেরেকের সংখ্যা = _______ টি।
এবার বড়ো পেরেকটার উপর তারের পাক সংখ্যা বাড়িয়ে দাও। সুইচ অন করো। এবার দেখো বড়ো পেরেক সবচেয়ে বেশি কটা ছোটো পেরেককে আকর্ষণ করতে পারছে? ছোটো পেরেকের সংখ্যা = _______ টি।
প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারের ছোটো পেরেকের সংখ্যা বাড়ল কেন?
দ্বিতীয়বারে তড়িৎ চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা বাড়ল কেন?
হাতেকলমে 9
এবার তারের পাক সংখ্যা একই রেখে সেল সংখ্যা বাড়িয়ে পরীক্ষাটা করো। এবার দেখো আগের চেয়ে তড়িৎ চুম্বকটা (বড়ো পেরেক) আরও বেশি সংখ্যক ছোটো পেরেককে আকর্ষণ করছে কী? তাহলে দেখা গেল সেল সংখ্যা বাড়লে অর্থাৎ তড়িতের পরিমাণ বাড়লে তড়িৎ চুম্বকের শক্তি বাড়ে।
তারের পাক সংখ্যা বাড়লে তড়িৎ চুম্বকের শক্তি বাড়ে।
জেনে রাখা ভালো
আজকাল তড়িৎ চুম্বকের ব্যবহার ক্রমে বেড়ে চলেছে। কয়েকটা উদাহরণ জেনে রাখো।
- ইলেকট্রিক কলিং বেলে তড়িৎ চুম্বকের ব্যবহার হয়।
- লাউড স্পিকার তৈরি করতে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
- ইলেকট্রিক ক্রেনে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
- চোখে কোনো চৌম্বক পদার্থের কণা পড়লে, তা তুলতে ব্যবহার হয় এক বিশেষ যন্ত্রের। সেই যন্ত্র তৈরিতে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
- মোটর তৈরিতে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
- টেলিফোনে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
তড়িৎ প্রবাহের ফলে আলো উৎপন্ন হয়
হাতেকলমে 10
একটা LED (Light Emitting Diode), একটা সেল, কয়েকটা দু-মুখ ছাড়ানো তার ও তোমার তৈরি একটা সুইচ নাও।
(Light Emitting Diode)
LED এমন এক ইলেকট্রনিক বস্তু যা সামান্য তড়িতেই আলো দেয়। এতে কোনো ফিলামেন্ট থাকে না। এর ধনাত্মক প্রান্তটা বড়ো আর ঋণাত্মক প্রান্তটা ছোটো। একটা LED কুড়ি বছরেও নষ্ট হয় না। বাজারে নানান রং-এর আলো নিঃসরণকারী LED কিনতে পাওয়া যায়।
নীচের ছবির মতো বর্তনী তৈরি করো।
এবার সুইচটা অন করো।
কী দেখতে পেলে?
LED-তে উৎপন্ন এই আলোক শক্তির উৎস কী?
এবার সুইচটা অফ করো।
কী দেখলে?
LED তে এবার আলো জ্বলল না কেন?
তাহলে দেখা যাচ্ছে LED-এর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে, আলো জ্বলে। তড়িৎ প্রবাহ না থাকলে আলো জ্বলে না।
তাহলে কী তড়িৎ প্রবাহই LED-তে উৎপন্ন আলোর কারণ?
LED-এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হওয়ার সময় তড়িৎশক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই সুইচ অন করলে LED -এর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ ঘটার ফলে LED জ্বলে ওঠে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
হাতেকলমে 11
এখন 'হাতেকলমে-10'-এর বদলে দুটো সেল নিয়ে নীচের ছবির মতো করে সার্কিট তৈরি করো। সুইচ 'অন' করো। 'হাতেকলমে- $10^{\prime}$-এর চেয়ে এবার LED-এর আলো কি বেশি জোরালো? ভেবে বলো তো, হাতেকলমে-10-এর সার্কিটের সঙ্গে এবারের সার্কিটের পার্থক্য কোথায়? তাহলে কি সেলের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আলোর জোর বেড়েছে? সেলের সংখ্যা বাড়লে সার্কিটে কিসের পরিমাণ বাড়ে?
তাহলে, LED-তে আলো জোরালো হওয়ার কারণ হলো [উপযুক্ত শব্দ বসাও] তড়িৎ প্রবাহ বাড়লে আলোর জোরও বাড়ে।
তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়
হাতেকলমে 12
একটা নাইক্রোম তার (যে-কোনো ইলেকট্রিকের দোকানে পাওয়া যায়), দু-প্রান্ত ছাড়ানো কয়েকটা প্লাস্টিক তার, দুটো সেল, তোমার তৈরি একটা সুইচ, দুটো পেরেক ও একটা কাঠের ছোটো তক্তা নাও। এবার ছবির মতো করে সার্কিট তৈরি করো। সুইচ 'অন' করার আগে নাইক্রোম তারটার উষ্ণতা হাত দিয়ে ছুঁয়ে অনুভব করো। এবার, সুইচ 'অন' করো। এ অবস্থায় 10-11 সেকেন্ড রেখে দাও। আবার স্পর্শ করে দেখো। দ্বিতীয়বারে নাইক্রোম তারের উষ্ণতা বেশি হলো কেন? প্রথম ক্ষেত্রে নাইক্রোম তারের মধ্যে দিয়ে কি তড়িৎ চলাচল করেছিল? দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নাইক্রোম তারের মধ্যে দিয়ে কি তড়িৎ চলাচল করেছিল? তাহলে তড়িৎ চলাচলের জন্যই কি নাইক্রোম তারের উষ্ণতা বেড়ে গিয়েছিল? অতএব জানা গেল পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ চলাচল করলে পরিবাহীতে তাপ উৎপন্ন হয়। আগের পরীক্ষাটিতে (হাতে কলমে 11) বাল্বটি কিছুক্ষণ জ্বলার পর তাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে দেখবে বাল্বটি গরম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রেও বাল্বের ফিলামেন্টের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ চলাচল করার ফলেই এই তাপ উৎপন্ন হয়েছে।
জেনে রাখা ভালো
তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফলের কয়েকটা প্রয়োগ জেনে রাখো।
- 1. ইলেকট্রিক ইস্ত্রি: এতে 'নাইক্রোম তার' অভ্রের উপর জড়ানো থাকে। ওর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলেই নাইক্রোম তার গরম হয়ে ওঠে।
2. ইলেকট্রিক বালব: বালবের ফিলামেন্ট তৈরি হয় টাংস্টেন ধাতু দিয়ে। ফিলামেন্টে তড়িৎ চলাচল হলেই তার মধ্যে উৎপন্ন হয় তাপ। এই তাপ শক্তি আলোক শক্তিতে বদলে গেলে উৎপন্ন হয় আলো।
3. ফিউজ তার: যে-কোনো বৈদ্যুতিক সার্কিটের নিরাপত্তার জন্য ফিউজ তার ব্যবহার হয়। এই ফিউজের মধ্যে দিয়েই তড়িৎ ওই সার্কিটে প্রবেশ করে। ফিউজ তার খুব কম উষ্ণতায় গলে যায়। ফলে কোনো কারণে খুব বেশি পরিমাণ তড়িৎ এসে পড়লে ফিউজ তার খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং গলে যায়। ফলে বর্তনী ছিন্ন হয়ে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই সার্কিটের কোনো ক্ষতি হয় না। ফিউজ তার আবার পালটে দেওয়া যায়।
ইস্ত্রির ভেতরে
নাইক্রোম তার
টাংস্টেন ফিলামেন্ট
ফিউজ
আলো থেকে তড়িৎ প্রবাহ উৎপাদন
বলতে পারো ক্যালকুলেটার কোন শক্তিতে চলে? আর এই শক্তি ক্যালকুলেটার কোথা থেকে পায়?
এবার ভেবে বলো, এমন ক্যালকুলেটারের কথা, যাকে চালু রাখতে 'সেল' বা 'ব্যাটারি' পালটাতে হয় না?
সোলার ক্যালকুলেটার
সোলার ক্যালকুলেটার হলো এক বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র। এই যন্ত্রও চলে তড়িৎ শক্তি দিয়ে। ওই তড়িৎ শক্তির উৎস কিন্তু বাজারে যে সেল বা ব্যাটারি পাওয়া যায় সেটা নয়। তাহলে ওই তড়িৎ আসে কোথা থেকে? আসলে, সোলার ক্যালকুলেটারের তড়িৎ জোগান দেয় সোলার প্যানেল। কতগুলো সোলার সেল দিয়ে এই প্যানেল তৈরি হয়। সূর্যের আলো ওই প্যানেলের উপর পড়লে ওই আলোক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে বদলে যায়।
ভৌত পরিবেশ
পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার
বিভিন্ন ধরনের শক্তি, তাদের উৎস ও রোজকার জীবনে তাদের ব্যবহার সম্বন্ধে তোমাদের একটা মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা এতক্ষণে হয়ে গেছে। আমাদের জীবনধারণ অনেকটাই বহু প্রচলিত কয়েকটি শক্তি-নির্ভর।
মাটির হাঁড়ি
ইত্যাদি পোড়াতে
রান্না করতে
বিদ্যুৎ উৎপাদনে
কামারশালায় লোহা
পিটিয়ে নানারকম যন্ত্র
বানাতে
অপারেশন করার
আগে ছুরি, কাঁচি
নির্বীজ করতে
ইট বানাতে
ইস্ত্রি করতে
স্টিম ইঞ্জিন চালাতে
তাপ শক্তির ব্যবহার
তুমি তাপশক্তির আরো কয়েকটি ব্যবহার নীচের ফাঁকা ঘরে লেখো-
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
কলকারখানার
মেশিন চালাতে
পাম্প চালাতে
আলো জ্বালাতে
কম্পিউটার চালাতে
মাইক বাজাতে
X-ray করতে
মেট্রোরেল চালাতে
মোবাইল ফোনের
ব্যাটারি চার্জ দিতে
ওয়াশিং মেশিন
চালাতে
ট্রাম চালাতে
তড়িৎ শক্তির ব্যবহার
তড়িৎ শক্তির অন্য কোনো ব্যবহার তোমার জানা থাকলে ওপরের ফাঁকা জায়গায় তা লেখো।
জেনারেটার
পাওয়ার টিলার
লঞ্চ
এরোপ্লেন
নীচে আমাদের পরিচিত জীবাশ্ম জ্বালানির অন্য কোনো ব্যবহার জানা থাকলে ফাঁকা জায়গায় তা লেখো।
পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পাওয়া শক্তির ব্যবহার
ভৌত পরিবেশ
এভাবেই আরো অনেক উদাহরণ তোমরা নিজেরাই নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে দিতে পারবে। এই ধরনের প্রচলিত শক্তির চাহিদা কি বছরের পর বছর একইরকম থাকছে?
মোটেই না। উপরন্তু দিনদিন তার চাহিদা বেড়েই চলেছে। তার একটা কারণ হলো জনস্ফীতি, আর অন্যান্য কারণ হলো নগরায়ন এবং যন্ত্র-নির্ভর সভ্যতা।
জনসংখ্যার সঙ্গে কোন কোন বিষয় সরাসরি যুক্ত?
আরো বেশি খাদ্য উৎপাদন
আরো বেশি বাসস্থান নির্মাণ
আরো বেশি পরিবহণ ব্যবস্থা
জনসংখ্যা বৃদ্ধি
এই প্রতিটি চাহিদা পূরণের জন্যেই চাই শক্তি। আর শক্তির প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হিসাবে আমরা কী বেছে নিয়েছি?
মাটির তলায় থাকা জ্বালানির ভান্ডারকে; যেগুলো সবই জীবাশ্ম জ্বালানি। এই জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়েই তৈরি করে নিয়েছি বিদ্যুৎ। আমাদের রাজ্যে বা দেশের মধ্যেও মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগই কয়লা পুড়িয়ে উৎপন্ন তাপবিদ্যুৎ।
ভেবে দেখো 100-150 বছর আগে লোকসংখ্যাই বা কত ছিল? তাহলে পরিবহণ, বিদ্যুতের ব্যবহার, যন্ত্রের ব্যবহার কত কম ছিল! আর এখন?
বর্তমানে শহরের মানুষের জীবনযাত্রা
পুরোনো দিনের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা
কিন্তু মাটির তলার এই যে প্রাকৃতিক সম্পদ (জীবাশ্ম জ্বালানি), তার জোগান কি অফুরান? কখনই নয়। এই কয়লা বা জ্বালানি তেল তৈরি হতে কত কোটি বছর সময় লেগেছে বলো তো?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
যতদিন সময় লেগেছে এই সম্পদ তৈরি হতে, তার অনেক কম সময়েই মানুষ খরচ করে ফেলেছে তার অধিকাংশ। এইভাবে একদিন শেষ হয়ে যাবে মাটির তলার কয়লা বা খনিজ তেলের ভান্ডার।
চাপ, তাপ ও দীর্ঘ সময়
কয়লা তৈরির বিভিন্ন ধাপ
জানো কি, মাটিতে ড্রিল করে প্রথম পেট্রোলিয়াম উৎপাদন শুরু হয় আমেরিকা মহাদেশে, 1859 সালে। এই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার যত বেড়েছে, পরিবেশে বেড়েছে তার দহনে উৎপন্ন পদার্থগুলোর বহুমুখী ক্ষতিকারক প্রভাবও। এই ধরনের জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশে যে যে ক্ষতিগুলো হতে পারে, তার কয়েকটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে লেখো।
তাহলে এর থেকে বাঁচতে গেলে আমরা কী করব? এখন যেসব প্রচলিত শক্তির ব্যবহার করছি, তার ব্যবহার কি বন্ধ করে দেবো? তখন আমাদের নীচের কাজগুলো চলবে কীভাবে?
- বাড়িতে আলো জ্বালাতে হবে, পাখা, টেলিভিশন, ফ্রিজ ইত্যাদি চালাতে হবে।
- জ্বালানি-নির্ভর পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।
- যন্ত্রচালিত খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।
- বহু ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে যেখানে বিভিন্ন শক্তি লাগে। তবে কি কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে? তাহলে এখনকার শিল্পগুলোর কী হবে?
সেজন্য আমাদের অন্য শক্তির উৎসের সন্ধান করতে হবে, যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি করবে আমাদের। এগুলোই হলো পরিবেশবান্ধব শক্তি। কী কী হতে পারে এই ধরনের শক্তির উৎস? এসো দেখা যাক।
সৌরশক্তি
আমরা প্রচলিত শক্তির উৎস হিসাবে যে জীবাশ্ম জ্বালানি এত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছি; তা আসলে উৎপন্ন হয়েছে কী থেকে? তোমরা তো জানো সবুজ উদ্ভিদ নিজেদের খাদ্য তৈরি করে। এই কাজে তারা কোন প্রাকৃতিক শক্তি কাজে লাগায়? সৌরশক্তি। প্রাণীরাও বেশিরভাগই খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপরেই নির্ভরশীল। অর্থাৎ প্রাণীরাও পরোক্ষভাবে কোন প্রাকৃতিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল? সৌরশক্তি। এর থেকে কী বোঝা যাচ্ছে?
উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে কোন শক্তি পরিবর্তিত হয়ে আবদ্ধ থাকছে? সৌরশক্তি। উদ্ভিদ বা প্রাণীর মৃত্যুর পর তাদের দেহাবশেষ কোটি কোটি বছর মাটির তলার তাপ ও চাপে থাকতে থাকতে পরিবর্তিত হয়ে কয়লা বা পেট্রোলিয়াম উৎপন্ন করে।
ভৌত পরিবেশ
তাহলে কয়লা বা জ্বালানি তেলে কোন শক্তি পরিবর্তিত হয়ে আবদ্ধ আছে? সৌরশক্তি। আমরা পরোক্ষভাবে এই সৌরশক্তির উপর এভাবে নির্ভর না করে কি সরাসরি সৌরশক্তির উপর নির্ভর করতে পারি না? এই চিন্তা থেকেই ব্যবহার শুরু হয়েছে সৌরকোশের। দিনের বেলায় যে সূর্যের আলো পৃথিবীতে অবিরাম এসে পৌঁছোয়, তাকে কাজে লাগিয়েই এই সৌরকোশে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। তারপর সৌরপ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ সঞ্চয় করা যায়। রাতের বেলা বা কম সূর্যের আলোতেও তা ব্যবহার করা যায়।
নীচের ছবিগুলো লক্ষ করো। দেখো কত নানারকম ক্ষেত্রে সৌরশক্তির ব্যবহার করা হয়।
সোলার লাইট
সোলার ক্যাপ
সোলার কুকার
সোলার বাইক
সোলার ওয়াটার হিটার
সোলার সিগন্যাল
সোলার মোবাইল চার্জার
বিদেশে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে সৌরশক্তির। এখন আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেও ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে তার ব্যবহার। তুমি কোথাও এরকম ব্যবহার দেখেছ কি? জানলে নীচে তা উল্লেখ করো:
কোন জায়গায় সৌরশক্তির ব্যবহার হচ্ছে?
কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে?
আশা করা যায়, আগামী দিনে সৌরশক্তির আরও ব্যাপক ব্যবহার আমরা দেখতে পাব। কিন্তু সৌরপ্যানেল থেকে আবার পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না তো?
অতটা হবে না, কারণ এমনিতেই এইসব প্যানেল 10-15 বছর ঠিক থাকে। তাছাড়াও এই প্যানেলের পুনর্নবীকরণ করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়। তবে সৌরকোশ তৈরি করতে শুরুতে কিছুটা প্রচলিত শক্তি ব্যয় করতে হয়।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
বায়ুশক্তি
আমাদের পরিচিত আরো একটা পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস প্রায় অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। তাহল বায়ুপ্রবাহের শক্তি। বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বড়ো মাপের বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করা সম্ভব। আমাদের রাজ্যের বকখালিতে গেলে দেখতে পাবে- বড়ো বড়ো বায়ুকল (Wind mill) কীভাবে এইকাজে সাহায্য করছে।
বায়ুপ্রবাহের শক্তি ব্যবহার করলে কী কী সুবিধা হতে পারে আমাদের?
- 1. বায়ুর কোনো অভাব নেই।
- 2. একবার বায়ুকল বসালে দীর্ঘদিন চলবে।
- 3. যেসমস্ত জায়গায় দূর থেকে তার সংযোগ করে বিদ্যুৎ আনা সম্ভব নয়, সেখানে বায়ুশক্তির উপর নির্ভর করা যেতে পারে।
আমাদের রাজ্যের অন্য কোনো জায়গায় অথবা ভিনরাজ্যের কোনো জায়গায় বায়ুকল দেখে থাকলে জায়গাটার নাম লেখো:
জানার চেষ্টা করো বায়ু শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কোন কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
জৈবশক্তি
অন্য একটা অপ্রচলিত কিন্তু পরিবেশবান্ধব শক্তি-উৎস কী হতে পারে?
জৈব বর্জ্য বা জৈব উৎসজাত (উদ্ভিজ্জ বা প্রাণীজ) পাওয়া জিনিস থেকে উৎপন্ন জৈব গ্যাস। ধরো, তোমার এলাকায় কারোর ছোটো বা বড়ো মাপের পশুখামার আছে। অথবা কারোর মুরগির পোলট্রি আছে। তাহলে তাদের মল ফেলা হলে তা পরিবেশে একটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। কীভাবে তা কাজে লাগানো যায়?
এই সমস্ত গৃহপালিত পশু-পাখির মল বড়ো গর্তে পচিয়ে তার থেকে যে গ্যাস উৎপন্ন হবে, তা কাজে লাগানো যেতে পারে। কী কী কাজে?
একটু ভেবে, লেখার চেষ্টা করো (প্রয়োজনে শিক্ষক/শিক্ষিকার সাহায্য নাও):
- 1.
- 2.
এভাবেই পৌরসভার পচনযোগ্য জৈব বর্জ্য বা কচুরিপানার মতো আগাছা কাজে লাগানো যাবে কিনা, তা আলোচনা করো। এগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যাবে।......
জৈব বর্জ্য থেকে জ্বালানি গ্যাস উৎপন্ন করার ব্যবস্থা
এই কয়েকটি পরিবেশবান্ধব শক্তি ছাড়াও আরো কয়েকটা অপ্রচলিত শক্তির বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলো কী কী?
জোয়ারভাটার শক্তি, মাটির নীচের তাপশক্তি ইত্যাদি।
এরপরও সত্যিকারের পরিবেশবান্ধব হতে গেলে আমাদের আরো একটু সতর্ক হতে হবে। কী কী বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে?
- যথাসম্ভব শক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- এখনকার মতোই যদি কয়লা বা খনিজ তেলের মতো জ্বালানির ব্যবহার চলতে থাকে, তবে হয়তো আরো 40 থেকে 50 বছর চলতে পারে অবশিষ্ট জ্বালানি দিয়ে। কিন্তু তারপর কী হবে? তাই শক্তির অপব্যবহার কমাতে হবে।
- উপযুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা বা খনিজ তেল থেকে অন্যান্য কম দূষক জ্বালানি তৈরি করা যেতে পারে। এভাবে কয়লা বা খনিজ তেলের প্রাকৃতিক সঞ্চয়ের আয়ু দীর্ঘায়িত করা যাবে।
- অন্য আরো একটা জ্বালানি কী হতে পারে বলো তো?
- মাটির তলায় বা পাহাড়ের ফাটলে আবদ্ধ জ্বালানি গ্যাসের উৎস থেকে যে গ্যাস আমাদের অজান্তেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা কাজে লাগাতে সচেষ্ট হতে হবে।
- আমাদের মতো নদীমাতৃক দেশে গভীর নলকূপের জল সেচের কাজে বা পানীয় জলের উৎস হিসেবে ব্যবহার না করে, এই সমস্ত কাজে নদীর জল ব্যবহার করলে মাটির তলা থেকে জল তোলার জন্য ব্যবহৃত প্রচলিত শক্তির অনেকটাই বাঁচানো যায়।
- যেখানে সুবিধা আছে সেখানে জলপথে পরিবহণের যন্ত্রহীন নৌকার ব্যবহার বাড়ানোর কথা ভাবা যেতে পারে।
- সাইকেলের মতো পরিবহণ- যার মধ্যে কোন জ্বালানি লাগে না, এরকম পরিবহণ আরো বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ চিনে সাইকেলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। তার জন্য রাস্তায় সাইকেল যাবার আলাদা পথ নির্দিষ্ট করা আছে।
- আমোদপ্রমোদে অতিরিক্ত পরিমাণ শক্তি ব্যবহার না করে, মানব কল্যাণের কথা ভাবা প্রয়োজন।
- অপ্রচলিত পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সকলের সচেতনতা সুনিশ্চিত করতে হবে।
2
সময় ও গতি
গতির ধারণা
নীচের বর্ণনাগুলি থেকে উপযুক্ত উত্তর বেছে নিয়ে সারণিটি পূর্ণ করো।
- 1. সরলরৈখিক গতি
- 2. বৃত্তাকার পথে গতি
- 3. ঘূর্ণন গতি
- 4. ঘূর্ণন ও সরলরৈখিক গতির মিশ্রণ
- 5. বক্রপথে গতি।
বিভিন্ন ধরনের গতির উদাহরণ | কেমনভাবে গতিশীল |
---|---|
(1) রুলারের ধার বরাবর পেনসিল দিয়ে সোজা দাগ কাটার সময় পেনসিলের শিসের অগ্রভাগের গতি। | সরলরৈখিক গতি |
(2) ঘড়ির কাঁটার অগ্রভাগের গতি | |
ছাদ থেকে সামনের দিকে ছুড়ে দেওয়া পাথরের গতি (3) | |
নাগরদোলার গতি (4) | |
(5) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাক খেতে থাকা লাটুর গতি | |
ঘড়ির পেন্ডুলামের গতি (6) | |
(7) সোজা রাস্তা বরাবর চলন্ত গাড়ির গতি | |
সরলরেখা বরাবর চলন্ত সাইকেলের চাকার গতি (8) | |
স্ক্রু-ডাইভারের গতি (9) | |
বৈদ্যুতিক পাখার গতি (10) |
।
পাশে যে পাতার চিত্রটি আছে একটি পিঁপড়ে তার ধার বরাবর A থেকে B-তে যাচ্ছে। খাতায় তার গতিপথের চিত্র অঙ্কন করো।
পিঁপড়েটি যদি পাতার কিনারা ধরে না গিয়ে পাতার মোটা শিরা বরাবর A থেকে B-তে যেত তাহলে তার গতিপথের চিত্র কেমন হতো তা খাতায় আঁকো। তোমার আঁকা চিত্র থেকে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজো : প্রথমে A থেকে B-তে যাওয়ার সময় পিঁপড়ের গতিপথের অভিমুখ কি সবসময় একই দিকে ছিল? দ্বিতীয়বার তার গতির অভিমুখ কি সবসময় একই দিকে ছিল?
এইরকম আরো কয়েকটি উদাহরণ ভাবার চেষ্টা করো যেখানে এক জায়গা থেকে অন্য এক জায়গায় বিভিন্ন পথে যাওয়া যায়। প্রত্যেকটি উদাহরণের কথা খাতায় লেখো ও তার গতিপথের চিত্র আঁকবার চেষ্টা করো।
সময় ও গতি
আগের আলোচনায় পিঁপড়েটি প্রথমে যে পথে পাতার কিনারা বরাবর A থেকে B-তে পৌঁছোল তার সমগ্র দৈর্ঘ্য হলো পিঁপড়ের প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্ব। এক্ষেত্রে পিঁপড়েটি যদিও AB সরলরেখা ধরে যায়নি, তবু AB সরলরেখার দৈর্ঘ্য এই যাত্রার একটি সামগ্রিক ধারণা দেয়। A থেকে B এর দিকে AB সরলরেখার এই মাপকে বলে সরণ। এক্ষেত্রে অতিক্রান্ত দূরত্ব ও সরণের মাপ আলাদা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে A থেকে নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে সরাসরি B-তে যাওয়ার যে পথ, তার দৈর্ঘ্য এবং ওই নির্দিষ্ট দিক একত্রে উল্লেখ করলে তাকে বলা হয় সরণ। এক্ষেত্রে অতিক্রান্ত দূরত্ব আর সরণের মাপ একই, কারণ পিঁপড়েটি সত্যিসত্যি AB সরলরেখা ধরেই গিয়েছিল।
অতএব দেখলে যে, কোনো গতির সময় আসল যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য এবং সরণের দৈর্ঘ্য আলাদা হতে পারে বা একই হতে পারে। এই দুয়ের মধ্যে সরণ সরলরেখা বরাবর এবং তাই একটি নির্দিষ্ট দিক উল্লেখ করে গতির বর্ণনা দেওয়া যায়। যেমন A থেকে B-তে যাবার সময় যাত্রাপথ যখন পাতার ধার বরাবর, তখন পিঁপড়েটি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে যাচ্ছে, ফলে এক এক সময় এক এক দিকে যাওয়ার প্রবণতা থাকছে। ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরলরেখাংশ এঁকে সরণ বুঝতে হচ্ছে। যেমন A থেকে P-তে বাঁকা পথে যাবার সময় AP সরলরেখাংশ এঁকে সরণ বুঝতে হবে। P থেকে Q-তে বাঁকা পথে যাবার সময় PQ সরলরেখাংশ এঁকে সরণ বুঝতে হবে। ফলে, A থেকে যাত্রা শুরুর সময় পিঁপড়েটির যাবার প্রবণতা P-এর দিকে, আবার P বিন্দু দিয়ে যাবার সময় যাবার প্রবণতা Q-এর দিকে ইত্যাদি। অতএব, আঁকাবাঁকা যাত্রাপথে, চলার দিক ঠিক কোনটি তা হয়তো ওই মুহূর্তে বলা যায়, কিন্তু শেষ অবধি ঠিক কোন দিকে যাওয়া হলো তা যাত্রাপথের শেষ বিন্দুটি না জানলে বলা যায় না। শেষ বিন্দুটি জানা হয়ে গেলে তখন বলা যায় যে, A থেকে B-এর দিকে যাওয়া হয়েছে। বোঝা গেল যে, সরণ জানা থাকলে তবেই যাত্রার অভিমুখ বলা যায়, অন্যথায় নয়।
ছবিতে যেমন দাগ দেওয়া আছে সেইরকমভাবে A থেকে B-তে যাওয়া হলে সরণ AB এবং তা A থেকে B -এর দিকে, তেমনি A থেকে P-তে যাওয়া হলে সরণ AP এবং তা A থেকে P-এর দিকে। একইভাবে P থেকে Q-তে যাবার সময়, সরণ PQ এবং তা P থেকে Q-এর দিকে ইত্যাদি।
তাহলে, কোনো একটি বস্তু যদি একটি বিন্দু M থেকে অন্য একটি বিন্দু N পর্যন্ত আঁকাবাঁকা পথে যাত্রা করে, আমরা বস্তুটির যাত্রাপথের দু-রকম দৈর্ঘ্যের হিসাব করতে পারি। একটি হলো আঁকাবাঁকা পথটির মোট দৈর্ঘ্য, আর অন্যটি হলো MN সরলরেখাংশের দৈর্ঘ্য, যদিও বস্তুটি MN সরলরেখা ধরে সত্যি সত্যি যাত্রা করেনি। এই MN সরলরেখাংশের দৈর্ঘ্য হলো বস্তুটির সরণের মাপ।
দ্রুতি, বেগ, ত্বরণ
যে-কোনো দূরত্ব অতিক্রম করতে একটা সময় লাগে। ঘড়ি ধরে সেই সময় মাপাও যায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন, দূরত্ব
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
বলতে আমরা ঠিক কি বুঝব? A থেকে P-তে যাবার সময় পাতার ধার ধরে গেলে বাঁকা রাস্তার পরিমাপ, না কি, A থেকে P পর্যন্ত সরলরেখাংশ AP-র পরিমাপ? একইভাবে A থেকে B-তে যাওয়ার সময় পাতার ধার বরাবর আঁকাবাঁকা পথটির পরিমাপ, না কি AB সরলরেখাংশের পরিমাপ?
আমরা যদি বক্র পথটির প্রকৃত দৈর্ঘ্য মাপি তাহলে সেই দূরত্বকে আমরা বলি প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্ব এবং যদি সরলরেখাংশ বরাবর দৈর্ঘ্য মাপি তাকে বলি সরণ। এবার যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব কীভাবে বদলাচ্ছে তা হিসাব করতে চাই তাহলেও দু-ভাবে তা করতে পারি- সময়ের সঙ্গে প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্ব কীভাবে বদলাচ্ছে এবং সরণ কীভাবে বদলাচ্ছে। দুটি হিসেব কিন্তু এক না-ও হতে পারে।
একটি উদাহরণ
যাত্রাপথের মাপ | যেতে সময় | |
---|---|---|
প্রকৃত দূরত্ব (সেমি) | সরণ (সেমি) | লেগেছে |
A থেকে P = 5 | AP = 2 | 5 সেকেন্ড |
A থেকে Q = 10 | AQ = 3 | 10 সেকেন্ড |
A থেকে R = 15 | AR = 4 | 15 সেকেন্ড |
এখন যদি কেউ জানতে চায় যে প্রতি সেকেন্ডে পিঁপড়েটি কতটা দূরত্ব অতিক্রম করেছে, তাহলে দুটি উত্তর হতে পারে- একটিতে দূরত্ব বলতে প্রকৃত দূরত্ব, আর অন্যটিতে দূরত্ব বলতে সরণের মাপ ধরলে উত্তর আলাদা হবে, যদিও একই পিঁপড়ের একই গতি নিয়ে হিসেব হচ্ছে।
5 সেকেন্ডে পিঁপড়ের প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্ব = 5 সেমি। অতএব 1 সেকেন্ডে পিঁপড়েটির প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্ব = $\frac{5}{5}$ = 1 সেমি।
একই সঙ্গে বলা যায়, 5 সেকেন্ডে পিঁপড়েটির সরণ = 2 সেমি। অতএব 1 সেকেন্ডে পিঁপড়েটির সরণ = $\frac{2}{5}$ = 0.4 সেমি।
প্রথম হিসেবটিকে বলে গড় দ্রুতি এবং দ্বিতীয়টি হলো গড়বেগ। 'গড়' বলার কারণ এই যে, আমরা কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তে এই হিসেবে করছি না। সময়ের একটি ব্যবধানে এই হিসেবে করছি। এই 5 সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিটি 1 সেকেন্ডে পিঁপড়েটি কি সমান দূরত্ব গেছে? না কি প্রথম 1 সেকেন্ডে যতটা গেছে, পরের 1 সেকেন্ডে তার চাইতে বেশি গেছে, তারপরের 1 সেকেন্ডে একটু কম গেছে এরকম বিভিন্ন 1 সেকেন্ডে আলাদা আলাদা দূরত্ব গেছে? আমরা যে হিসেবে উপরে অঙ্ক কষে বের করলাম তাতে কিন্তু একটি হিসেবই বেরিয়েছে- প্রতি 1 সেকেন্ডে সরণ হয়েছে 0.4 সেমি এবং সেটা ওই 5 সেকেন্ডের ভেতরকার সব 1 সেকেন্ডের জন্য একই। প্রকৃত দূরত্বের বেলাতেও তাই। প্রতি 1 সেকেন্ডে 1 সেমি করে। এই যে আমরা একটা সার্বিক হিসেব পেলাম, ভেতরের আসল খুঁটিনাটি জানতে পারলাম না, সেজন্য এই হিসেব হলো গড় হিসেব।
কোনো গতিশীল বস্তু এক সেকেন্ডে কতটা দূরত্ব অতিক্রম করল (তা সে প্রকৃত অতিক্রান্ত দূরত্বই হোক বা সরণই হোক) তা থেকে বস্তুটি কত দ্রুত চলছে তার হিসেব পাওয়া যায়।
ট্রেনে বা বাসে চড়ার সময় তুমি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ যে, প্রথম চালু হবার পর ট্রেন বা বাসের গতি ক্রমশ বাড়তে থাকে অর্থাৎ আরো বেশি জোরে চলতে থাকে। এই সময় ট্রেন বা বাসের বেগ আগে যা ছিল পরে তার চাইতে বেশি হয়। ঠিক তেমনি যখন স্টেশনে বা বাস স্টপে থামার দরকার হয় তখন গাড়িটির গতি ক্রমশ কমতে থাকে। এক সেকেন্ডে আগে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করছিল পরে তার চাইতে কম দূরত্ব অতিক্রম করে। অর্থাৎ আগে যা বেগ ছিল পরে সেই বেগ কমে যায়।
বেগ বাড়তে অথবা কমতে থাকার সময় এক সেকেন্ডে বেগ কতটা বাড়ল বা কতটা কমল তার পরিমাণকে বলে ত্বরণ (Acceleration)। তুমি একটা সাইকেলে চড়ে এক সেকেন্ডে 5 মিটার বেগে চলছিলে। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখে তুমি বুঝতে পারলে বৃষ্টি আসছে। বৃষ্টি নামার আগে বাড়িতে পৌঁছোতে হলে বেগ বাড়াতে হবে। অবশেষে বেগ বাড়িয়ে 1 সেকেন্ডে 8 মিটার করলে। এই বেগ বাড়াতে তোমার সময় লাগল 3 সেকেন্ড।
তাহলে, প্রথমে তোমার বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে 5 মিটার অর্থাৎ 5 মি/সেকেন্ড।
3 সেকেন্ড পর তোমার বেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে 8 মিটার অর্থাৎ 8 মি/সেকেন্ড।
3 সেকেন্ড সময়ে বেগের পরিবর্তন (পরের বেগ - আগের বেগ) = (8 মি/সেকেন্ড) - (5 মি/ সেকেন্ড) = 3 মি/সেকেন্ড।
অতএব, 1 সেকেন্ড সময়ে বেগের পরিবর্তন = $\frac{3 \text{ মি/সেকেন্ড}}{3}$ = 1 মি/সেকেন্ড।
... এক্ষেত্রে বেগ পরিবর্তনের হার 1 মি/সেকেন্ড।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে তোমার ত্বরণ 1 মি/সেকেন্ড²।
যখন তুমি বাড়ির অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গেলে তখন সাইকেলের ব্রেক কষলে সাইকেলের বেগ কমতে থাকল। এইভাবে 2 সেকেন্ড পর সাইকেল নিয়ে তুমি বাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লে। অর্থাৎ এখন তোমার সাইকেলের বেগ হলো শূন্য (zero)।
এক্ষেত্রে প্রথমে তোমার বেগ ছিল 8 মি/সেকেন্ড।
2 সেকেন্ড পর তোমার বেগ হলো 0 মি/সেকেন্ড।
2 সেকেন্ড সময়ে বেগের পরিবর্তন (পরের বেগ - আগের বেগ) = 0 মি/সেকেন্ড - 8 মি/সেকেন্ড = -8 মি/সেকেন্ড।
অতএব, 1 সেকেন্ড সময়ে বেগের পরিবর্তন = $\frac{-8 \text{ মি/সেকেন্ড}}{2}$ = -4 মি/সেকেন্ড।
... এক্ষেত্রে বেগ পরিবর্তনের হার 4 মি/সেকেন্ড²।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
এক্ষেত্রে ত্বরণ ঋণাত্মক। একে ঋণাত্মক ত্বরণ বা মন্দন (Retardation) বলে। এই যে আমরা ত্বরণ হিসেব করলাম, এটাও কিন্তু গড় হিসেব। একটি সময়ের ব্যবধানে করা সামগ্রিক হিসেব, নির্দিষ্ট কোনো মুহূর্তের হিসেব নয়।
বলের ধারণা ও নিউটনের গতিসূত্রের ধারণা, বলের পরিমাপ
একটা রবারের বলকে সমান মেঝের উপর দিয়ে গড়িয়ে দাও। এবার ফিতে বা স্কেল দিয়ে মেপে দেখো বলটা কতদূর গেল।
এখন ঘাস আছে এমন মাঠের উপর দিয়ে ওই বলটাকে একই জোরে গড়িয়ে দাও। এবারও মেপে দেখো বলটা কতদূর গেল।
মেঝের উপর দিয়ে বলটা যতদূর গেল, ঘাসের উপর দিয়ে ততটা যেতে পারল না কেন?
বলটা (Ball) দুই ক্ষেত্রেই এক সময় থেমে গিয়েছিল। তাহলে কি বলটা গড়াবার সময় বাধা পেয়েছিল? বলটা চলতে বাধা পেয়েছিল বলেই কি থেমে গেল?
কোন ক্ষেত্রে বলটা (Ball) বেশি বাধা পেয়েছিল?
ভেবে বলো তো বল (Ball)টা যদি কোনো বাধা না পেত তবে কী হতো?
সময় ও গতি
হাতেকলমে 1
টেবিলের উপর একটা বাঁধানো বই রাখো।
এবার বইটাকে বাঁ হাত দিয়ে পাশ থেকে ডানদিকে ঠেলো। বইটা কোন দিকে সরে গেল?
এবার একইরকমভাবে বইটাকে ডান হাত দিয়ে উলটোদিকে ঠেলো। এবার বইটা কোন দিকে সরলো?
এবার, দু-হাত দিয়ে বইটার দু-পাশ থেকে পরস্পর উলটো দিকে ঠেলো। এমনভাবে ঠেলো যাতে বইটা কোনো দিকেই সরে না যায়। ভেবে দেখো বইটা কোনোদিকেই না সরে যাওয়ার কারণ কী?
যদি কোনো একদিকের ঠেলা, অন্য দিকে ঠেলার চেয়ে বেশি জোরালো হতো, তবে কী হতো? এরকম ঠেলা বা ধাক্কা-কে আমরা বলি বল (force)।
তাহলে দেখা গেল, কোনো বস্তুর ওপর পরস্পর বিপরীত দিক থেকে সমমানের বল (force) প্রয়োগ করলে, বস্তুটার ওপর 'সার্বিক বল' শূন্য হয়ে যায়।
রঞ্জনা পড়ার টেবিলে পড়তে বসে ভাবে ওর বিজ্ঞান বইটাকে যদি ও কোনোদিন না সরায় এবং অন্য কেউও যদি তা না করে তবে ওর বিজ্ঞান বইটা কী চিরকালই ওই অবস্থায় থাকবে? ভেবে দেখো, রঞ্জনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারো কিনা।
টেবিলের উপরে রাখা তোমার বিজ্ঞান বইটা তুমি সরাতে চাইলে তোমাকে কী করতে হবে?
বল প্রয়োগে বস্তুর গতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইংরেজ বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন তিনটি সূত্র বলে গিয়েছেন। চলো ওই সূত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করি।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
স্যার আইজাক নিউটন
1642 খ্রিস্টাব্দে 25 ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের উলসথর্প গ্রামে এক চাষির পরিবারে জন্ম। 1665 খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ। 1669 খ্রিস্টাব্দে মাত্র 27 বছর বয়সে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পদে যোগদান করেন। তাঁর গতিসূত্র, মহাকর্ষসূত্র, সূর্যরশ্মির বর্ণালি, আলোর কণিকাতত্ত্ব, দ্বিপদ উপপাদ্য, ক্যালকুলাস বিজ্ঞান ও গণিতের জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তিনি 1672 খ্রিস্টাব্দ থেকে টানা 25 বছর রয়্যাল সোসাইটির সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। 1727 খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর লেখা বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ 'প্রিন্সিপিয়া'।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্রের ধারণা:
কোনো বস্তুর ওপর যদি বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে-
- (i) স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থেকে যাবে,
- (ii) আর গতিশীল বস্তু আগে থেকেই যে দিকে যে বেগ নিয়ে চলছিল সেদিকে সেই বেগ নিয়ে চিরকাল চলতে থাকে।
তাহলে দেখা গেল যে,
বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করা হলে, কোনো স্থির বস্তু হয় চিরকাল স্থির, বা সমবেগে সরলরেখা বরাবর গতিশীল কোনো বস্তু চিরকাল ওই একই গতিতে একই সরলরেখা ধরে চলতে থাকে। স্থির থাকা বা একই বেগে চলতে থাকার এই ধর্মকে বলে বস্তুর জাড্য। স্থির থাকার ধর্মকে স্থিতিজাড্য। আর সমবেগে গতিশীল থাকার ধর্মকে গতিজাড্য বলা হয়। আর বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করলে এই অবস্থা বদলে দেওয়া যায় তাকে বলে বল।
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে জাড্য
(1) স্থির বাস হঠাৎ চলতে আরম্ভ করলে কোনো কিছু না ধরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী পিছনদিকে হেলে পড়ে। কোনো কিছু ধরে থাকা যাত্রীদেরও ওই একইরকম অনুভূতি হয়। থেমে থাকা বাসে যাত্রীরাও থেমে থাকে। সব কিছু তখন স্থির অবস্থায় রয়েছে। বাস হঠাৎ চলতে শুরু করল, ফলে বাসের স্থির অবস্থা পালটে গেল। বাসের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের পা চলতে শুরু করল কারণ পা বাসের মেঝের সংস্পর্শে আছে। কিন্তু যাত্রীদের বাকি শরীর স্থির থাকতে চাইল। অতএব পায়ের সঙ্গে সঙ্গে এগোল না। যাত্রীরা তাই পিছনের দিকে হেলে পড়ল।
সময় ও গতি
(2) তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ কাক (বা অন্য কোনো পাখি) উড়তে উড়তে ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দিয়েও দিব্যি ডানা মেলে বাতাসে ভাসতে ভাসতে অনেকটা এগিয়ে যায়-
ডানা ঝাপটানো বন্ধ করেও কাকটা কি করে ভাসতে ভাসতে অতটা এগিয়ে গেল বলো তো? পাখিটা যখন উড়ছে তখন সে গতিশীল, ফলে পাখি উড়তে উড়তে ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দিলেও তার গোটা শরীরটা গতিজাড্যের জন্য তখনও সমবেগ বজায় রাখতে চেষ্টা করে, ফলে পাখিটা শুধু ডানা মেলে (না ঝাপটিয়েও) অনেকটা দূর এগিয়ে যেতে পারে।
হাতেকলমে 2
তোমার টেবিলের ফাঁকা ড্রয়ারটার বেশিরভাগ অংশটা খোলো। এবার একটা পেনসিল পাশের ছবির মতো করে রাখো। পেনসিলটাকে দেখা যায় এমনভাবে রেখে ড্রয়ারটা একটু জোরে বন্ধ করো। আবার খোলো। কী দেখতে পেলে? বন্ধ করার সময় পেনসিলটা কোন দিকে গড়াচ্ছে? খোলার সময় পেনসিলটা কোন দিকে গড়াচ্ছে? কেন এমন হলো?
হাতেকলমে 3
একটা খাতার পাতা যত বড়ো হয় তত বড়ো কাগজ নাও। ছবির মতো করে কাগজটা টেবিলের ওপর রাখো। এবার ওই কাগজের ওপরে তোমার পেনসিল বাক্সটা রাখো। এখন ওই কাগজের একটা প্রান্ত ধরে কাগজটাকে এক ঝটকায় এমনভাবে টানো যাতে পেনসিল বাক্সটা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে এবং নড়ে না যায়। ভেবে বলো তো এরকম হলো কেন? নিউটনের প্রথম সূত্রে তোমরা জাড্য ধর্মের কথা জেনেছ। ওই সূত্র ব্যবহার করে এই ঘটনা কেন ঘটল বলতে পারো কি?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
ভালোভাবে চিন্তা করে দেখো তো নীচের ঘটনাগুলোতে জাড্য ধর্ম (গতিজাড্য বা স্থিতিজাড্য) খুঁজে পাও কিনা? বিষয়গুলো নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করো।
- কুলো দিয়ে চাল ঝাড়া (চাল থেকে ধানের তুষ বার করা) হয়।
- চলন্ত অটোরিকশা হঠাৎ বাধ্য হয়ে ব্রেক কষে থেমে গেলে, যাত্রীরা সামনের দিকে (অটোরিকশার গতির দিকে) ঝুঁকে পড়ে।
- সাইকেল চালাতে চালাতে পা চালানো থামিয়ে দিলেও সাইকেল সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় না, পা না চালিয়েও বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া যায়।
- কোটের ধুলো ঝাড়তে কোটকে ঝাড়া দেওয়া হয়।
- ধুলোমাখা কোটের উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করলে (খুব জোরে নয়) ধুলো কোট থেকে আলাদা হয়ে পড়ে।
- স্পোর্টসের মাঠে লং জাম্প দেবার সময়, প্রতিযোগী অনেকটা দূর থেকে দৌড়ে আসে।
- দেয়ালের গায়ে ডাস্টার ঝাড়া হয়।
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্রের ধারণা:
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে আমরা জেনেছি, বাইরে থেকে 'বল' প্রয়োগ করা হলে একটি বস্তুর বেগ বদলে যায়। নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র অনুসরণ করে বলা যায়, (i) একটি নির্দিষ্ট ভরের বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা বল যত বাড়ানো হবে, 1 সেকেন্ডে বস্তুটির বেগের পরিবর্তনও (অর্থাৎ ত্বরণ) তত বাড়বে। প্রযুক্ত বলের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে, উৎপন্ন ত্বরণও দ্বিগুণ হবে। অর্থাৎ বল ও ত্বরণ-এর মধ্যে সরল সম্পর্ক রয়েছে। (ii) বল প্রয়োগের অভিমুখ যে দিকে, উৎপন্ন ত্বরণের অভিমুখও সেই দিকে। অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের দিকেই বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পায়।
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র অনুসরণ করে প্রযুক্ত বলের মান নির্ণয়ের সমীকরণ:
প্রযুক্ত বল = বস্তুর ভর × এক সেকেন্ডে বস্তুর বেগের পরিবর্তন
= বস্তুর ভর × বস্তুতে উৎপন্ন ত্বরণ (যেহেতু, 1 সেকেন্ডে বেগের পরিবর্তন = ত্বরণ)
$$F=m \times a$$
[F-বল, m-ভর, a- ত্বরণ]
SI পদ্ধতিতে বলের (Force) একক 1 নিউটন।
$$1 \text{ নিউটন} = 1\text{kg} \times 1 \text{ মিটার/সেকেন্ড}^2$$
সময় ও গতি
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রের ধারণা:
রেশমা দিদিমণির সঙ্গে গিয়েছিল কলকাতায়। বাড়িতে ফেরার পথে রেশমা যখন সবার শেষে লাফ দিয়ে নৌকা থেকে নামল তখন রেশমা অবাক হয়ে গেল কী আশ্চর্য, নৌকাটা জলে পিছিয়ে যাচ্ছে কেন? দিদিমণি বললেন, ভালো করে ভেবে দেখো, নৌকাটা তো আর এমনি এমনি সরে যায়নি। রেশমা বলল, নিশ্চয়ই কেউ না কেউ নৌকাটাকে পিছনদিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে কে ঠেলল? আমিই তো সব শেষে নামলাম। তবে তুমিই বল প্রয়োগ করেছ। কারণ তুমি আর নৌকা ছাড়া সেখানে তৃতীয় কেউ তো ছিল না। আমি তো লাফ দিয়ে নেমেছিলাম! ও! বুঝতে পেরেছি আমি লাফ দিয়ে নামার সময় নৌকাটাকে তো পিছনদিকে ঠেলেছিলাম। ঠিক ধরেছ, ওই ঠেলাই নৌকাটাকে পিছনদিকে সরিয়ে দিয়েছে।
তাহলে আমি কীভাবে সামনের দিকে লাফাতে পারলাম? আমাকে তো কেউ সামনের দিকে ঠেলে দেয়নি! দিদিমণি হেসে বললেন, তোমার প্রশ্নেই তোমার উত্তর লুকিয়ে আছে। আমার প্রশ্নে কী উত্তর লুকিয়ে আছে দিদি, আর একটু পরিষ্কার করে বলবেন। তার মানে তোমাকে কেউ ঠেলেছেই ঠেলেছে। আমার পিছনে নৌকা ছাড়া আর তো কেউ ছিল না! তাহলে কি নৌকাটাই আমাকে ঠেলল। একদম ঠিক। ওই নৌকাই, তোমার দেওয়া বলের ঠিক উলটো দিকে, সমান জোরে, তোমার পায়ে বলপ্রয়োগ করেছে। আর ওই বল তোমাকে সামনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ভারি মজার ব্যাপার তো। তাহলে আমি যেখানেই বল প্রয়োগ করি না কেন, সেও আমায় সমান জোরে আমার দেওয়া বলের উলটোদিকে বল প্রয়োগ করবে? স্যার আইজাক নিউটন তাঁর তৃতীয় গতিসূত্রে সে কথাই তো বলেছেন। কী রকম? নিউটন বলেছেন- 'প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীতমুখী একটা প্রতিক্রিয়া বল আছে।'
তাহলে দিদি আমার আর নৌকার বলের মধ্যে কোনটা 'ক্রিয়া' আর কোনটা 'প্রতিক্রিয়া'? আসলে ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া ওভাবে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। কারণ 'ক্রিয়া' আর 'প্রতিক্রিয়া'
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
সবসময় একসঙ্গেই ঘটে। একটা আগে আর একটা পরে, এভাবে নয়। তাই যে-কোনো একটা 'ক্রিয়া' হলে, অন্যটা হবে তার 'প্রতিক্রিয়া'।
তাহলে দিদি এই 'ক্রিয়া' আর 'প্রতিক্রিয়া' আলাদা আলাদা বস্তুর উপর কাজ করে, তাই না। ঠিক ধরেছ, তোমার বল প্রয়োগ হয়েছে নৌকার ওপর, আর নৌকার বল প্রয়োগ হয়েছে তোমার পায়ের উপর।
নীচের ঘটনাগুলোতে নিউটনের তৃতীয় সূত্র কীভাবে কাজ করছে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো।
- 1. আমরা যখন হাঁটি
- 2. জলে মাছ সাঁতার কাটে।
শক্তি ও কার্য
তুমি অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে, তোমার কাজ করার সামর্থ্য কমে যায়। এরপর যখন তুমি খাবার খাও তখন আবার কাজ করার 'সামর্থ্য' ফিরে পাও কি? খাবার থেকে আমরা নিশ্চয়ই এমন কিছু পাই যা আমাদের 'কাজ করার সামর্থ্য' জোগায়। খাবার থেকে আমরা পাই শক্তি। কাজ করার সামর্থ্যই হলো শক্তি।
1) মোটামুটি ভারী 10টা বই আর 10টা খাতা জোগাড় করো। তোমার স্কুলের ব্যাগের মধ্যে 10টা বই আর 10টা খাতা ভরো। এবার ব্যাগটা মেঝে থেকে চেয়ারের উপর তোলো। তারপর ব্যাগটা মেঝে থেকে আলমারির উপর তোলো।
এখন বলো (i) পৃথিবীর টানের (মানে ব্যাগের ওজনের) উলটোদিকে ব্যাগটাকে ওঠাতে দুই ক্ষেত্রেই কী তোমাকে সমান 'বল' প্রয়োগ করতে হয়েছে?
(ii) কোন ক্ষেত্রে তোমাকে বেশি 'পরিশ্রম' করতে হয়েছে?
2) তুমি তোমার ওই স্কুল ব্যাগে আবার 10টা বই 10টা খাতা নাও। এখন ব্যাগটা মেঝে থেকে টেবিলে তোলো। এবার ব্যাগ থেকে 10টা খাতা ও 5 টা বই নামিয়ে রাখো। তারপর আবার মেঝে থেকে ব্যাগটা টেবিলে তোলো।
এখন বলো (i) ব্যাগের ওজনের উলটোদিকে কোন ক্ষেত্রে তোমাকে বেশি 'বল' প্রয়োগ করতে হলো?
(ii) কোন ক্ষেত্রে তোমাকে বেশি 'পরিশ্রম' করতে হয়েছে?
1 নং পরীক্ষায় দেখা গেল একই ওজনের বস্তুকে যত বেশি উঁচুতে তোলা যায় তত বেশি পরিশ্রম করতে হয়। যদিও দুই ক্ষেত্রেই সমান সমান বল প্রয়োগ করতে হয়েছে।
2 নং পরীক্ষা থেকে দেখা গেল বিভিন্ন ওজনের বস্তুকে একই উচ্চতায় তোলার সময় যে বস্তু যত বেশি ভারী তার জন্য তত বেশি বল লাগে ও পরিশ্রমও বেশি করতে হয়।
1 ও 2 নং পরীক্ষা দুটির অভিজ্ঞতা থেকে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ যে সাধারণভাবে যে কাজে 'পরিশ্রম বেশি' সে কাজের জন্য তোমার শক্তিও বেশি খরচ করতে হয়। যেখানে 'শক্তি বেশি' খরচ করতে হয় সেখানে কাজের পরিমাণও বেশি হয়।
তাহলে দেখা গেল যে ক্ষেত্রে বেশি উঁচুতে বস্তুকে তোলা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণও বেশি হচ্ছে (1 নং পরীক্ষা)। আবার যেখানে 'বেশি বল' প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেখানেও 'কাজের পরিমাণ' বেশি হচ্ছে (পরীক্ষা নং 2)।
তাহলে ভেবে দেখত কাজের পরিমাণ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করছে?
পদার্থবিজ্ঞানে কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্যে নীচের সম্পর্কটি ব্যবহার করা হয় -
কাজের পরিমাণ = (প্রযুক্ত বল) (প্রযুক্ত বলের প্রভাবে বস্তুর সরণের পরিমাণ)
$$W=F\times d$$
W= কাজ
F = বল
d = সরণ
SI পদ্ধতিতে কাজ মাপার একক
এক নিউটন বল প্রয়োগ করে যদি একটি বস্তুকে বল প্রয়োগের দিকে এক মিটার সরানো হয় তবে এক জুল পরিমাণ কাজ করা হয়েছে বলা হয়। এক জুল হলো কাজ পরিমাপের SI একক।
$$W=F\times d$$
$$1 \text{ জুল} = 1 \text{ নিউটন} \times 1 \text{ মিটার}$$
আরো কিছু পরীক্ষা :
উপকরণ: দুটো দুই কিলোগ্রামের আর একটা এক কিলোগ্রামের বাটখারা, দুটো সমান উচ্চতার টেবিল।
1) তুমি আর তোমার বন্ধু মেঝেতে রাখা একটা করে 2 কিলোগ্রামের বাটখারা নিয়ে একই টেবিলের উপর
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
তুলে রাখলে। - তাহলে তুমি আর তোমার বন্ধু 'সমান পরিমাণ' কাজ করলে।
2) এবার মেঝেতে একটা 2kg আর একটা 1kg-র বাটখারা রাখো। এখন, তুমি 2kg -র বাটখারাটি নিয়ে টেবিলের উপর তুলে রাখলে। আর তোমার বন্ধু 1kg -র বাটখারাটি টেবিলের উপর তুলে রাখল। তাহলে তুমি, তোমার বন্ধুর কাজের 2 গুণ কাজ করেছ।
3) একটা টেবিলের উপর আর একটা সম উচ্চতার টেবিল বা সম উচ্চতার টুল উঠিয়ে রাখা হলো। মেঝের উপর দুটো 2 kg -র বাটখারা আছে।
এবার তুমি মেঝে থেকে একটা বাটখারা নিয়ে নীচের টেবিলে তুলে রাখো। তোমার বন্ধু অন্য বাটখারাটি নিয়ে উপরের টেবিলের উপর রাখল। -স্বভাবতই এখানে তোমার বন্ধু তোমার কাজের 2-গুণ কাজ করেছে।
4) একটা স্প্রিং নিয়ে দু-দিক থেকে টান দাও। কি দেখতে পেলে? স্প্রিংটা কি সামগ্রিকভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে গেল অর্থাৎ স্থান পরিবর্তন করল? না কি স্প্রিংটার শুধুমাত্র আকৃতির পরিবর্তন হলো? এক্ষেত্রে বল প্রয়োগের ফলে কাজ হলো কি? বল প্রয়োগের ফলে কোনো বস্তুর সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন না হলেও যদি বস্তুর আকার বা আয়তনের পরিবর্তন হয় তাহলেও বলা হয় প্রযুক্ত বল কাজ করেছে।
5) ছবির মতো দেখতে একটি পিচকিরি নাও, সেটির মুখে একটি বেলুন ছবির মতো করে আটকাও। এবার পিচকিরির হাতলটি ভেতর দিকে ঠেলো।
কী দেখতে পেলে? বেলুন লাগানো সমগ্র পিচকিরিটি কি এক জায়গা- থেকে অন্য জায়গায় সরে গেল? বেলুনটা ফুলল কেন? তোমার বল কিসের ওপর প্রযুক্ত হলো? তোমার প্রযুক্ত বলের দ্বারা কি কোনো কাজ হলো?
সময় ও গতি
এক্ষেত্রেও দেখা গেল বল প্রয়োগের ফলে বস্তু সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করল না কিন্তু তোমার প্রযুক্ত বল পিচকিরির ভিতরে বায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করায় বায়ু সংকুচিত হয়ে পিচকিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে বেলুনের ভেতর প্রবেশ করেছে। ছোটো ছোটো সরণের ফলে বেলুনের আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে বেলুন ফুলে উঠেছে। তাই এখানেও বল প্রয়োগের ফলে কাজ হয়েছে।
স্প্রিং-এর ক্ষেত্রেও স্প্রিং-এর সামগ্রিক সরণ না হলেও তার ভিতরকার ছোটো ছোটো অংশের স্থান পরিবর্তনের ফলে কাজ হয়েছে ($W=F\times d$), যা স্প্রিংটির আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
6) একটা চেয়ারে বসে জোরে শ্বাস নাও। কিছু অনুভব করতে পারলে?
তোমার বুক কি উঠছে নামছে মনে হচ্ছে?
এই ওঠানামার জন্য 'বল' কে প্রয়োগ করছে? কোথায় প্রয়োগ করছে? এই বলের প্রভাবে কোনো কাজ হচ্ছে কি?
বুকে হাড় ও পেশি দিয়ে তৈরি একটা খাঁচা আছে, যার ভেতর থাকে ফুসফুস। নিশ্বাস প্রশ্বাসের সময় বিভিন্ন পেশির সংকোচন প্রসারণের ফলে ফুসফুসেরও সংকোচন-প্রসারণ হয়। ফলে ফুসফুসের আকার ও আয়তনের পরিবর্তন হয়। এখানে পেশির বলের দ্বারা কাজ হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ফুসফুসের সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন অর্থাৎ সরণ হয় না - কিন্তু 'কাজ' হয়ে থাকে।
যদি ভালোভাবে খেয়াল করো তবে বুঝতে পারবে যে, পেশির বল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিয়াশীল হয় ফুসফুসের ভিতরের বায়ুর উপর। ফলে বায়ু শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে অথবা ভেতরে প্রবেশ করে এবং এভাবে 'কাজ' সংঘটিত হয়। কিন্তু এসবের কিছুই আমাদের চোখে পড়ে না বলে আমরা তা বুঝতে পারি না।
7) তুমি একটা দেয়ালকে অনেকক্ষণ ধরে ঠেললে। তোমার দেওয়া বলের অভিমুখে দেয়ালের কি কোনো সরণ হয়েছে?
দেয়ালের আকার বা আয়তনের কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
তুমি কি ক্লান্ত হয়েছ?
ঠেলার সময় তোমার হৃৎস্পন্দন কি বেড়ে গিয়েছে? ঠেলার সময় কি তোমার নিশ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে গিয়েছিল?
তোমার শরীরের কোনো অংশ কি গরম হয়ে গিয়েছিল?
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
দেয়ালে বল প্রয়োগ করার জন্য তোমার কি শক্তি খরচ করতে হয়েছে? শরীরের ক্লান্তি, হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, গা গরম হওয়া ইত্যাদি বুঝতে সাহায্য করে যে শরীরের ভেতর শক্তি খরচ হয়েছে। আবার যেহেতু কাজ করার সামর্থ্যকেই শক্তি বলে সেহেতু শক্তি যখন ব্যবহার করা হয়েছে তখন অবশ্যই কাজ হয়েছে।
এবার একটা চক নিয়ে দেয়ালের একটা অংশে ভালো করে ঘষো যাতে ওই জায়গাটা সাদা হয়ে যায়। এখন ওই সাদা অংশে দেয়ালটাকে ঠেলো।
- দেয়ালটা কি সরলো?
- দেয়ালের ওই স্থানটা (যেখানে বল প্রয়োগ করেছিলে) কি ভেতরে ঢুকে গেল?
- দেয়ালের ওই স্থানের চকের গুঁড়োর কিছু অংশ কি উঠে গেছে? কোথায় উঠে গেছে?
- এবার তোমার হাতটা ভালো করে দেখো তো সেখানে (তালুতে) চকের দাগ লেগেছে কিনা?
তুমি যখন দেয়ালটাকে ঠেলছিলে তখন কি তোমার হাতের তালুর মাংসপেশি কিছুটা চেপটে গিয়েছিল? এবার ভেবে বলো তো দেয়ালটা যদি রাবারের তৈরি হতো, তবে ঠেলার স্থানটা কি ভেতরে ঢুকে যেত?
দেয়ালে বল প্রয়োগ করার সময় যেমন হাতের তালুর মাংস পেশির আকারের পরিবর্তন হয়, তেমনই দেয়ালের ওই স্থানেও (চাপ দেওয়া স্থানে) আকৃতিগত কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু এই পরিবর্তন এত সামান্য যে তা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। সে কারণেই চকের গুঁড়ো ব্যবহার করে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি যে বল প্রয়োগে সেখানেও সরণ হয়। তাই তোমার হাতে চকের দাগ দেয়াল থেকে উঠে এসেছিল।
দেয়ালে বল প্রয়োগ করার জন্যে পেশিকোশে দরকার হয়ে পড়ে অতিরিক্ত শক্তি। কোশে কোশে শ্বসন কার্য বেড়ে যায়, ফলে খাদ্য ও অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃৎস্পন্দন, বেড়ে যায় রক্তবাহে রক্তচাপ, বেড়ে যায় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের হার। পেশিকোশের দরকার শক্তি কিন্তু সেখানে অক্সিজেনের জোগান প্রয়োজনের তুলনায় কম। শক্তির চাহিদা মেটাতে কোশে কোশে শুরু হয় এক বিশেষ ধরনের শ্বসন। তারফলেই পেশিকোশে জমতে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড। আর পেশিকোশে এই ল্যাকটিক অ্যাসিড জমার ফলে পেশিতে ব্যথার অনুভূতি জাগে। শ্বসনের হার বেড়ে যাওয়ার জন্য তাপ শক্তিও বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। তাই আমাদের শরীরও গরম হয়। কিন্তু এতসব কি আমাদের চোখে পড়ে? তাই ওসব কাজ আমরা দেখতে পাই না, ঠিক যেমন পিচকিরির ভেতরকার কাজ, ফুসফুসের ভেতরকার কাজ আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
3
পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
চিহ্ন, সংকেত ও যোজ্যতা
ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা কিছু মৌলিক পদার্থের নাম ও চিহ্নের কথা জেনেছি। মৌলের চিহ্ন দিয়েই মৌলের সংক্ষেপে নাম বোঝায়। এখন তোমরা তার উপর ভিত্তি করে নীচের সারণিতে দেওয়া মৌলগুলোর নাম থেকে চিহ্ন লেখার চেষ্টা করো। প্রয়োজনে শিক্ষক/শিক্ষিকার সাহায্য নাও।
মৌলের নাম | নামের বানান | চিহ্ন |
---|---|---|
অ্যালুমিনিয়াম | Aluminium | |
নিকেল | Nickel | |
আর্সেনিক | Arsenic | |
সিলিকন | Silicon | |
জিঙ্ক | Zinc | |
বোরন | Boron |
সারণি - 2
মৌলের নাম | ইংরাজি নাম | ল্যাটিন নাম | নামের বানান | চিহ্ন |
---|---|---|---|---|
টিন | Tin | স্ট্যানাম | Stannum | |
পারদ | Mercury | হাইড্রার্জিরাম | Hydrargyrum | Hg |
সিসা | Lead | প্লাম্বাম | Plumbum |
এবার আমরা এমন কিছু মৌলিক পদার্থের নাম ও চিহ্ন শিখব, যেখানে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের নাম, মৌলগুলোর আবিষ্কারের স্থান বা যে বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন তাঁর দেশের নাম অথবা বিশেষ কিছু গ্রহের নামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
শব্দভাণ্ডার থেকে শব্দ নিয়ে তুমি নীচের তিনটে সারণি পূরণ করো।
সারণি - 1
মৌলের নাম | বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম নামের বানান |
চিহ্ন |
---|---|---|
কুরিয়াম | Curium | |
আইনস্টাইনিয়াম | Einsteinium |
সারণি - 2
মৌলের নাম | নামের বানান | স্থানের নাম | চিহ্ন |
---|---|---|---|
আমেরিসিয়াম | Americium | ||
পোলোনিয়াম | Polonium |
সারণি - 3
মৌলের নাম | নামের বানান | গ্রহের নাম | চিহ্ন |
---|---|---|---|
ইউরেনিয়াম | Uranium | ||
নেপচুনিয়াম | Neptunium | ||
প্লুটোনিয়াম | Plutonium |
শব্দভান্ডার: Pu, America, Po, Uranus, Am, Madame Curie, Pluto, Es, No, Neptune, Albert Einstein, Np, U, Poland.
মৌলের পরমাণু জুড়ে মৌল অণু বা যৌগ অণু তৈরি হয়। তাহলে এসো আমরা দেখি, পরমাণু কীভাবে তৈরি।
পাশের ছবিতে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও লিথিয়াম পরমাণুর গঠন কেমন তা দেখানো হয়েছে। পরমাণুর এই ছবির মধ্যে কত রকমের কণা তোমরা দেখতে পাচ্ছ?
হাইড্রোজেন
হিলিয়াম
লিথিয়াম
পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
- তিনরকমের অতিক্ষুদ্র কণা পরমাণুতে থাকতে পারে। পরমাণুর মধ্যে এই তিনরকমের কণার অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে।
- (+) দিয়ে দেখানো কণাগুলো প্রোটন, এগুলো ধনাত্মক তড়িৎ আধানযুক্ত বা ধনাত্মক চার্জযুক্ত কণা।
- (☐) দিয়ে দেখানো কণাগুলো ইলেকট্রন। এগুলো ঋণাত্মক তড়িৎ আধানযুক্ত বা ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কণা।
- (⚪) দিয়ে দেখানো কণাগুলো নিউট্রন। এদের কোনো তড়িৎ নেই।
একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রনের তড়িতের বা চার্জের পরিমাণ সমান। একটি ধনাত্মক ও একটি ঋণাত্মক চার্জ একত্রে থাকলে তড়িৎবিহীন বা নিস্তড়িৎ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ছবিতে আরো লক্ষ করো, প্রোটন আর নিউট্রনগুলো পরমাণুর কেন্দ্রে একটা ছোটো জায়গায় জোট বেঁধে আছে। ওই জায়গাটা হলো পরমাণুর কেন্দ্রক বা নিউক্লিয়াস। ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে ঘিরে বিভিন্ন পথে ঘোরে। যে পথগুলোতে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘোরে তাদের কক্ষপথ বলে।
সাধারণ অবস্থায় সব মৌলের পরমাণুতেই প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান হয়। তাই মৌলের পরমাণু নিস্তড়িৎ। কোনো পরমাণুর প্রোটন সংখ্যাকে তার পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা তার পারমাণবিক সংখ্যা বলে।
একটি ইলেকট্রনের ভর প্রোটন বা নিউট্রনের ভরের প্রায় 2000 ভাগের এক ভাগ। তাই নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রনের মোট ভরই মোটামুটিভাবে কোনো পরমাণুর ভর একথা বলা যেতেই পারে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যাই ওই পরমাণুর ভরসংখ্যা।
এবার তোমরা আগের পাতার হিলিয়াম পরমাণুর গঠনের ছবি থেকে নীচের সারণি পূরণ করো।
প্রোটন | হিলিয়াম পরমাণুতে বিভিন্ন কণার সংখ্যা ইলেকট্রন নিউট্রন |
পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক |
ভরসংখ্যা |
---|---|---|---|
এবার এসো আমরা আরো কয়েকটা পরিচিত মৌলের পরমাণুর গঠনের ছবি দেখি: ছবিতে + 6 মানে 6টি প্রোটন, 6 মানে 6 টি নিউট্রন এইভাবে বুঝতে হবে।
কার্বন
সোডিয়াম
ক্লোরিন
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
আগের পাতার ছবিগুলো দেখে নীচের সারণিটি পূরণ করো:
মৌলের নাম | প্রোটন সংখ্যা | ইলেকট্রন সংখ্যা | নিউট্রন সংখ্যা | পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক | ভর সংখ্যা |
---|---|---|---|---|---|
কার্বন | |||||
সোডিয়াম | |||||
ক্লোরিন |
মৌলের পরমাণু থেকে এক বা একের বেশি ইলেকট্রন বেরিয়ে গেলে প্রোটন সংখ্যার থেকে ইলেকট্রন সংখ্যা কম হয়ে যায়। তখন ধনাত্মক (Positive) আধানযুক্ত আয়ন বা ক্যাটায়ন উৎপন্ন হয়। পরমাণু এক বা একের বেশি ইলেকট্রন নিয়ে নিলে কী হবে? তখন প্রোটন সংখ্যার থেকে ইলেকট্রন সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে এবং ঋণাত্মক (Negative) আধানযুক্ত আয়ন তৈরি হবে। একে অ্যানায়ন বলা হয়। সাধারণত ধাতু ও অধাতু জুড়ে যৌগ তৈরি হবার সময় ধাতুর পরমাণুগুলো ইলেকট্রন ছাড়ে আর অধাতুর পরমাণুগুলো ইলেকট্রন গ্রহণ করে। যেমন সোডিয়াম পরমাণু একটা ইলেকট্রন ছেড়ে দিলে যে ক্যাটায়ন তৈরি হবে তাকে Na⁺ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তেমনি ক্যালশিয়াম পরমাণু টি ইলেকট্রন ছেড়ে দিলে Ca²+ ক্যাটায়ন তৈরি করবে।
Na পরমাণু Na আয়ন
একটি ইলেকট্রন ছাড়লে
Cl পরমাণু Cl-আয়ন
একটি ইলেকট্রন নিলে
আবার ক্লোরিন পরমাণু একটা ইলেকট্রন নিয়ে নিলে যে অ্যানায়ন উৎপন্ন হবে তাকে Cl- দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একে ক্লোরাইড আয়ন বলে।
তোমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নীচের সারণি পূরণ করো। প্রয়োজনে শিক্ষক বা শিক্ষিকার সাহায্য নাও।
কোন মৌলের পরমাণু | মৌলের চিহ্ন | কটি ইলেকট্রন নিলে বা ছেড়ে দিলে |
তৈরি হওয়া ক্যাটায়ন বা অ্যানায়নের চিহ্ন ও নাম |
---|---|---|---|
পটাশিয়াম | K | 1 টি ইলেকট্রন ছাড়লে | K+ (পটাশিয়াম) |
ম্যাগনেশিয়াম | 2 টি ইলেকট্রন ছাড়লে | ||
জিঙ্ক | 2 টি ইলেকট্রন ছাড়লে | ||
লেড | 2 টি ইলেকট্রন ছাড়লে | ||
অ্যালুমিনিয়াম | 3 টি ইলেকট্রন ছাড়লে | ||
ফ্লুওরিন | F | 1 টি ইলেকট্রন নিলে | F- (ফ্লুওরাইড) |
অক্সিজেন | 2 টি ইলেকট্রন নিলে | (অক্সাইড) | |
সালফার | 2 টি ইলেকট্রন নিলে | (সালফাইড) | |
ব্রোমিন | 1 টি ইলেকট্রন নিলে | (ব্রোমাইড) |
আমরা জানি একাধিক মৌলের পরমাণু যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। কখনো কখনো একই মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু অথবা বিভিন্ন মৌলের পরমাণু জোটবদ্ধ অবস্থায় আয়নরূপে অবস্থান করে; তখন সাধারণভাবে তাদের মূলক বলা হয়। জোটবদ্ধ অবস্থাতেই ওই মূলকগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। মূলকের আধানের পরিমাণই প্রাথমিকভাবে ওই মূলকের যোজ্যতা বলে ধরা যেতে পারে। পরে আমরা অন্য পদ্ধতিতে মূলকগুলোর যোজ্যতা কীভাবে নির্ণয় করা যায় তা জানব।
তোমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নীচের সারণি পূরণ করো।
মূলকরের নাম | সংকেত | তার আধান বা চার্জ | যোজ্যতা |
---|---|---|---|
নাইট্রেট | $\text{NO}_3^-$ | -1 | 1 |
সালফেট | $\text{SO}_4^{2-}$ | ||
কার্বনেট | $\text{CO}_3^{2-}$ | ||
অ্যামোনিয়াম | $\text{NH}_4^+$ | +1 | 1 |
বাইকার্বনেট | $\text{HCO}_3^-$ | ||
ফসফেট | $\text{PO}_4^{3-}$ | ||
হাইড্রক্সাইড | OH- |
এবার আমরা অন্য পদ্ধতিতেও মূলকগুলোর যোজ্যতা কীভাবে জানা যায় তা দেখব। আমরা জানি যে দুটো মৌলের পরস্পর যুক্ত হবার ক্ষমতাকে ওই মৌলদের যোজন ক্ষমতা বলা হয়।
নীচের সারণিতে একক যোজ্যতাবিশিষ্ট ধাতু সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের সঙ্গেও বিভিন্ন মূলক যুক্ত হয়েছে এমন কয়েকটি যৌগের সংকেত ও তাদের মধ্যে উপস্থিত মূলকের সংকেত দেওয়া হলো। সংকেতে সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের পরমাণুর সংখ্যা থেকে মূলকগুলোর যোজ্যতা লেখো:
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
যৌগের সংকেত | তার মধ্যে উপস্থিত অ্যানায়নের নাম ও সংকেত | অ্যানায়নের যোজ্যতা |
---|---|---|
$\text{Na}_2\text{S}$ | সালফাইড ($\text{S}^{2-}$) | 2 |
$\text{NaHCO}_3$ | বাইকার্বনেট ($\text{HCO}_3^-$) | |
NaCN | সায়ানাইড ($\text{CN}^-$) | |
NaOH | হাইড্রক্সাইড (OH-) | |
NaF | ফ্লুওরাইড ($\text{F}^-$) | |
NaBr | ব্রোমাইড ($\text{Br}^-$) | |
$\text{NaNO}_2$ | নাইট্রাইট ($\text{NO}_2^-$) | |
$\text{Na}_2\text{SO}_3$ | সালফাইট ($\text{SO}_3^{2-}$) | |
$\text{KMnO}_4$ | পারম্যাঙ্গানেট ($\text{MnO}_4^-$) | |
$\text{K}_2\text{Cr}_2\text{O}_7$ | ডাইক্রোমেট ($\text{Cr}_2\text{O}_7^{2-}$) | |
$\text{NaAlO}_2$ | অ্যালুমিনেট ($\text{AlO}_2^-$) | |
$\text{Na}_2\text{ZnO}_2$ | জিঙ্কেট ($\text{ZnO}_2^{2-}$) | |
$\text{NaHSO}_4$ | বাইসালফেট ($\text{HSO}_4^-$) |
ষষ্ঠ শ্রেণিতে হাইড্রোজেনের যোজ্যতাকে 1 ধরে হাইড্রোজেন যুক্ত বিভিন্ন যৌগ থেকে তোমরা জেনেছ যে অক্সিজেনের যোজ্যতা 2, ক্লোরিনের যোজ্যতা 1। এবার আমরা ক্লোরিনের বিভিন্ন যৌগ থেকে বিভিন্ন ধাতু ও অধাতুদের যোজ্যতা নির্ণয় করব। নীচের সারণিতে বিভিন্ন মৌলের সঙ্গে যুক্ত ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যাই হলো ওই মৌলের যোজ্যতা।
যৌগের নাম | সংকেত | যৌগে ক্লোরিন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত ধাতু |
যৌগে ধাতুর পরমাণু পিছু ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা |
ধাতুর যোজ্যতা |
---|---|---|---|---|
সোডিয়াম ক্লোরাইড | NaCl | Na | 1 | |
পটাশিয়াম ক্লোরাইড | KCI | K | 1 | |
ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{CaCl}_2$ | Ca | 2 | 2 |
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{MgCl}_2$ | Mg | 2 | |
ফেরাস ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_2$ | Fe | 2 | |
ফেরিক ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_3$ | Fe | 3 | 3 |
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড | $\text{AlCl}_3$ | Al | 3 | |
জিঙ্ক ক্লোরাইড | $\text{ZnCl}_2$ | Zn | 2 | |
কিউপ্রাস ক্লোরাইড | CuCl | Cu | 1 | |
কিউপ্রিক ক্লোরাইড | $\text{CuCl}_2$ | Cu | 2 | |
সিলভার ক্লোরাইড | AgCl | Ag | 1 | |
লেড ক্লোরাইড | $\text{PbCl}_2$ | Pb | 2 |
ওপরের সারণির যৌগগুলোর সংকেত লক্ষ করলে তোমরা দেখবে আয়রন, কপার প্রভৃতি মৌলের একাধিক যোজ্যতা রয়েছে। এইসব মৌলগুলো যোজ্যতা পরিবর্তন করে একই মৌলের বিভিন্ন সংখ্যক পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগ তৈরি করতে পারে। এইরকম যোজ্যতাকে মৌলের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বলে। সারণিটি ভালো করে লক্ষ করে দেখবে যে সব যৌগে মৌলের যোজ্যতা কম সেই যৌগে তাদের নামের শেষে 'আস' যুক্ত হয়েছে আর যে যৌগে ওই মৌলেরই যোজ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের নামের শেষে 'ইক' যুক্ত হয়েছে। যেমন ধরো ফেরাস ও ফেরিক যৌগে আয়রনের যোজ্যতা যথাক্রমে 2ও 3।
সংকেত লেখার কৌশল
বিভিন্ন মৌল কিংবা মূলকের যোজ্যতাকে ব্যবহার করে কীভাবে যৌগের সংকেত লেখা যায় তা দেখা যাক। ধরা যাক, A ও B দুটি মৌল বা মূলক যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা m এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা n হলে A এবং B দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে $\text{A}_n\text{B}_m$। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (m)কে B মৌলের বা মূলকের ডানদিকে একটু নীচে এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (n)-কে A মৌলের বা মূলকের ডানদিকে লিখে প্রকাশ করলে সেটি হবে A ও B মৌল বা মূলক দ্বারা তৈরি যৌগের সংকেত।
পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
সংকেত লেখার কৌশল (অব্যাহত)
বিভিন্ন মৌল কিংবা মূলকের যোজ্যতাকে ব্যবহার করে কীভাবে যৌগের সংকেত লেখা যায় তা দেখা যাক। ধরা যাক, A ও B দুটি মৌল বা মূলক যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা m এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা n হলে A এবং B দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে $\text{A}_n\text{B}_m$। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (m)কে B মৌলের বা মূলকের ডানদিকে একটু নীচে এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (n)-কে A মৌলের বা মূলকের ডানদিকে লিখে প্রকাশ করলে সেটি হবে A ও B মৌল বা মূলক দ্বারা তৈরি যৌগের সংকেত।
উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়ামের যোজ্যতা 1 এবং ক্লোরিনের যোজ্যতা 1। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত হবে NaCl।
ক্যালশিয়ামের যোজ্যতা 2 এবং অক্সিজেনের যোজ্যতা 2। তাই ক্যালশিয়াম অক্সাইডের সংকেত হবে CaO।
যদি একটি মৌলের যোজ্যতা অন্য মৌলের যোজ্যতার গুণিতক হয়, যেমন কার্বনের যোজ্যতা 4 এবং অক্সিজেনের যোজ্যতা 2। তাহলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংকেত হবে $\text{CO}_2$। এখানে $C_2O_4$ না লিখে যোজ্যতার সরল অনুপাত ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া: পরিচিত কিছু উদাহরণ
আমরা আমাদের চারপাশে প্রতিদিন নানা ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাই। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন ভৌত পরিবর্তন এবং কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের ফলে নতুন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ তৈরি হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় এক বা একাধিক পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নতুন পদার্থ গঠন করে।
উদাহরণস্বরূপ, লোহার মরচে পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। এখানে লোহা বাতাসের অক্সিজেন এবং জলের সাথে বিক্রিয়া করে নতুন পদার্থ - লোহার অক্সাইড (মরচে) তৈরি করে।
$$\text{4Fe} + \text{3O}_2 + \text{nH}_2\text{O} \rightarrow \text{2Fe}_2\text{O}_3 \cdot \text{nH}_2\text{O}$$
এটি একটি ধীর বিক্রিয়া।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। যেমন, কাঠ পোড়ানো, খাবার হজম হওয়া, সালোকসংশ্লেষ, ইত্যাদি।
কাঠ পোড়ানো একটি দহন বিক্রিয়া। কাঠ বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প এবং তাপ ও আলো উৎপন্ন করে।
$$\text{C}_6\text{H}_{10}\text{O}_5 ( \text{কাঠ}) + 6\text{O}_2 (\text{বাতাস}) \rightarrow 6\text{CO}_2 + 5\text{H}_2\text{O} + \text{তাপ} + \text{আলো}$$
খাবার হজম হওয়া একটি জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্য উপাদানগুলি সরল উপাদানে ভেঙে যায়, যা শরীর দ্বারা শোষিত হতে পারে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
যৌগের নাম | সংকেত | যৌগে ক্লোরিন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত ধাতু |
যৌগে ধাতুর পরমাণু পিছু ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা |
ধাতুর যোজ্যতা |
---|---|---|---|---|
সোডিয়াম ক্লোরাইড | NaCl | Na | 1 | |
পটাশিয়াম ক্লোরাইড | KCI | K | 1 | |
ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{CaCl}_2$ | Ca | 2 | 2 |
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{MgCl}_2$ | Mg | 2 | |
ফেরাস ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_2$ | Fe | 2 | |
ফেরিক ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_3$ | Fe | 3 | 3 |
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড | $\text{AlCl}_3$ | Al | 3 | |
জিঙ্ক ক্লোরাইড | $\text{ZnCl}_2$ | Zn | 2 | |
কিউপ্রাস ক্লোরাইড | CuCl | Cu | 1 | |
কিউপ্রিক ক্লোরাইড | $\text{CuCl}_2$ | Cu | 2 | |
সিলভার ক্লোরাইড | AgCl | Ag | 1 | |
লেড ক্লোরাইড | $\text{PbCl}_2$ | Pb | 2 |
ওপরের সারণির যৌগগুলোর সংকেত লক্ষ করলে তোমরা দেখবে আয়রন, কপার প্রভৃতি মৌলের একাধিক যোজ্যতা রয়েছে। এইসব মৌলগুলো যোজ্যতা পরিবর্তন করে একই মৌলের বিভিন্ন সংখ্যক পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগ তৈরি করতে পারে। এইরকম যোজ্যতাকে মৌলের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বলে। সারণিটি ভালো করে লক্ষ করে দেখবে যে সব যৌগে মৌলের যোজ্যতা কম সেই যৌগে তাদের নামের শেষে 'আস' যুক্ত হয়েছে আর যে যৌগে ওই মৌলেরই যোজ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের নামের শেষে 'ইক' যুক্ত হয়েছে। যেমন ধরো ফেরাস ও ফেরিক যৌগে আয়রনের যোজ্যতা যথাক্রমে 2ও 3।
সংকেত লেখার কৌশল
বিভিন্ন মৌল কিংবা মূলকের যোজ্যতাকে ব্যবহার করে কীভাবে যৌগের সংকেত লেখা যায় তা দেখা যাক। ধরা যাক, A ও B দুটি মৌল বা মূলক যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা m এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা n হলে A এবং B দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে $\text{A}_n\text{B}_m$। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (m)কে B মৌলের বা মূলকের ডানদিকে একটু নীচে এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (n)-কে A মৌলের বা মূলকের ডানদিকে লিখে প্রকাশ করলে সেটি হবে A ও B মৌল বা মূলক দ্বারা তৈরি যৌগের সংকেত।
পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
সংকেত লেখার কৌশল
বিভিন্ন মৌল কিংবা মূলকের যোজ্যতাকে ব্যবহার করে কীভাবে যৌগের সংকেত লেখা যায় তা দেখা যাক। ধরা যাক, A ও B দুটি মৌল বা মূলক যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা m এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা n হলে A এবং B দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে $\text{A}_n\text{B}_m$। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (m)কে B মৌলের বা মূলকের ডানদিকে একটু নীচে এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (n)-কে A মৌলের বা মূলকের ডানদিকে লিখে প্রকাশ করলে সেটি হবে A ও B মৌল বা মূলক দ্বারা তৈরি যৌগের সংকেত।
উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম (Na) এবং ক্লোরিন (Cl)-এর উভয়ের যোজ্যতা 1। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত হবে NaCl।
ক্যালশিয়াম (Ca)-এর যোজ্যতা 2 এবং অক্সিজেন (O)-এর যোজ্যতা 2। তাই ক্যালশিয়াম অক্সাইডের সংকেত হবে CaO।
যদি একটি মৌলের যোজ্যতা অন্য মৌলের যোজ্যতার গুণিতক হয়, যেমন কার্বন (C)-এর যোজ্যতা 4 এবং অক্সিজেন (O)-এর যোজ্যতা 2। তাহলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংকেত হবে $\text{CO}_2$। এখানে $\text{C}_2\text{O}_4$ না লিখে যোজ্যতার সরল অনুপাত ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া: পরিচিত কিছু উদাহরণ
আমরা আমাদের চারপাশে প্রতিদিন নানা ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাই। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন ভৌত পরিবর্তন এবং কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের ফলে নতুন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ তৈরি হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় এক বা একাধিক পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নতুন পদার্থ গঠন করে।
উদাহরণস্বরূপ, লোহার মরচে পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। এখানে লোহা বাতাসের অক্সিজেন এবং জলের সাথে বিক্রিয়া করে নতুন পদার্থ - লোহার অক্সাইড (মরচে) তৈরি করে।
$$\text{4Fe} + \text{3O}_2 + \text{nH}_2\text{O} \rightarrow \text{2Fe}_2\text{O}_3 \cdot \text{nH}_2\text{O}$$
এটি একটি ধীর বিক্রিয়া।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। যেমন, কাঠ পোড়ানো, খাবার হজম হওয়া, সালোকসংশ্লেষ, ইত্যাদি।
কাঠ পোড়ানো একটি দহন বিক্রিয়া। কাঠ বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প এবং তাপ ও আলো উৎপন্ন করে।
$$\text{C}_6\text{H}_{10}\text{O}_5 (\text{কাঠ}) + 6\text{O}_2 (\text{বাতাস}) \rightarrow 6\text{CO}_2 + 5\text{H}_2\text{O} + \text{তাপ} + \text{আলো}$$
খাবার হজম হওয়া একটি জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্য উপাদানগুলি সরল উপাদানে ভেঙে যায়, যা শরীর দ্বারা শোষিত হতে পারে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
সালোকসংশ্লেষ, যা উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য ব্যবহার করে, এটিও একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। এখানে উদ্ভিদ সূর্যালোকের শক্তি ব্যবহার করে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে গ্লুকোজ ও অক্সিজেন তৈরি করে।
$$\text{6CO}_2 + \text{6H}_2\text{O} + \text{সূর্যালোক} \rightarrow \text{C}_6\text{H}_{12}\text{O}_6 + \text{6O}_2$$
চুনের জলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস চালনা করলে চুনের জল ঘোলা হয়ে যায়। এটিও একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। এখানে ক্যালশিয়াম হাইড্রোক্সাইড (চুনের জল) কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রাব্য ক্যালশিয়াম কার্বনেট তৈরি করে।
$$\text{Ca}(\text{OH})_2 (\text{aq}) + \text{CO}_2 (\text{g}) \rightarrow \text{CaCO}_3 (\text{s}) \downarrow + \text{H}_2\text{O} (\text{l})$$
আমরা প্রতিদিন যে ওষুধ খাই, সেগুলোও বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়।
পদার্থের শ্রেণীবিভাগ: মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ
আমাদের চারপাশে আমরা অসংখ্য জিনিস দেখতে পাই। এই সমস্ত জিনিস বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে তৈরি। পদার্থকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: মৌলিক পদার্থ ও যৌগিক পদার্থ।
মৌলিক পদার্থ:
যে পদার্থকে রাসায়নিকভাবে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে সেই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো নতুন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন - হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, লোহা, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, ইত্যাদি। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হলো পরমাণু।
পৃথিবীতে 118টির বেশি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় 98টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং বাকিগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি।
যৌগিক পদার্থ:
যে পদার্থকে রাসায়নিকভাবে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন - জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড, সাধারণ লবণ, চিনি, ইত্যাদি। যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হলো অণু।
জল ($\text{H}_2\text{O}$) হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নামক দুটি মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। কার্বন ডাইঅক্সাইড ($\text{CO}_2$) কার্বন ও অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। সাধারণ লবণ (NaCl) সোডিয়াম ও ক্লোরিন দিয়ে তৈরি।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ উভয়েরই নিজস্ব ধর্ম থাকে এবং এরা একে অপরের থেকে ভিন্ন হয়।
4
পরিবেশ গঠনে পদার্থের ভূমিকা
আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ রয়েছে। এই পদার্থগুলো পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা এখন পরিবেশ গঠনে মাটি ও জলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
মাটি: একটি প্রাকৃতিক সম্পদ
আমরা যেখানে বাস করি, তার বেশিরভাগ অংশই মাটি দিয়ে ঢাকা। মাটি আমাদের জীবনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। মাটি শুধু উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান নয়, এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও অপরিহার্য।
মাটির গুরুত্ব:
- **উদ্ভিদের বৃদ্ধি:** মাটি উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় জল ও পুষ্টি সরবরাহ করে। বিভিন্ন খনিজ লবণ, জল এবং বায়ু মাটির কণাগুলোর মধ্যে বিদ্যমান থাকে, যা উদ্ভিদের শিকড়ের মাধ্যমে শোষিত হয়।
- **প্রাণীর বাসস্থান:** অসংখ্য অণুজীব, কীটপতঙ্গ, কেঁচো এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী মাটির নিচে বাস করে। এরা মাটিকে উর্বর করতে সাহায্য করে এবং পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
- **জল পরিশোধন:** মাটি প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির জল মাটির স্তর ভেদ করে নিচে যাওয়ার সময় মাটির কণাগুলো দূষক পদার্থ শোষণ করে জলকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
- **কার্বন চক্রে ভূমিকা:** মাটিতে থাকা অণুজীব এবং উদ্ভিদ কার্বন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং মাটিতে কার্বন জমা করতে সাহায্য করে।
- **কৃষি:** মানুষের খাদ্যের একটি বড় অংশ মাটি থেকে আসে। ফসল ফলানোর জন্য উর্বর মাটি অপরিহার্য।
জল: জীবনের অপরিহার্য উপাদান
জল জীবনের জন্য অপরিহার্য। এটি জীবজগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জলের গুরুত্ব:
- **জীবদেহে:** জীবদেহের প্রায় ৭০-৮০% জল দিয়ে গঠিত। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি পরিবহন এবং বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
- **উদ্ভিদের জন্য:** সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য জল অপরিহার্য। এটি উদ্ভিদের কোষের আকার বজায় রাখতে এবং পুষ্টি পরিবহনে সাহায্য করে।
- **বাস্তুতন্ত্র:** জল বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের (যেমন নদী, পুকুর, সমুদ্র) মূল ভিত্তি। অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ জলে বাস করে।
- **জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:** সমুদ্র এবং বড় জলাশয়গুলি পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- **মানবসৃষ্ট ব্যবহার:** পানীয় জল, সেচ, শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন (জলবিদ্যুৎ) এবং পরিবহনের জন্য জল অপরিহার্য।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
মাটি ও জলের গুণমান এবং দূষণ
মাটি এবং জল, উভয়ই পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এদের গুণমান আমাদের জীবনধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কার্যকলাপের কারণে এদের গুণমান ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জীবজগতের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
মাটি দূষণ:
মাটি দূষণ বলতে মাটির ভৌত, রাসায়নিক বা জৈব বৈশিষ্ট্যের এমন পরিবর্তনকে বোঝায় যা মাটি বা মাটির উপর নির্ভরশীল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকারক।
মাটি দূষণের কারণ:
- শিল্প বর্জ্য: শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, যেমন ক্যাডমিয়াম, সিসা, পারদ, আর্সেনিক ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটিকে দূষিত করে।
- কৃষি বর্জ্য: অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং মাটির অণুজীবদের ক্ষতি হয়।
- প্লাস্টিক ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য: প্লাস্টিক, কাঁচ, ধাতব বর্জ্য ইত্যাদি মাটিতে পচে না, ফলে মাটির গঠন নষ্ট হয় এবং তা মাটির বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।
- পয়ঃনিষ্কাশন ও শহুরে বর্জ্য: অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন এবং শহুরে বর্জ্য মাটিতে মিশে রোগজীবাণু ও বিষাক্ত পদার্থ ছড়ায়।
- তেল ও রাসায়নিক পদার্থ ছড়ানো: তেল বা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে ছড়িয়ে পড়লে তা মাটির রাসায়নিক গঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
জল দূষণ:
জল দূষণ বলতে জলের ভৌত, রাসায়নিক বা জৈব বৈশিষ্ট্যের এমন পরিবর্তনকে বোঝায় যা জল বা জলের উপর নির্ভরশীল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকারক।
জল দূষণের কারণ:
- শিল্প বর্জ্য: কল-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ, যেমন ভারী ধাতু, তেল, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি সরাসরি জলাশয়ে মিশে জলকে দূষিত করে।
- পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য: অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন এবং শহুরে বর্জ্য নদী, খাল ও সমুদ্রে মিশে জলকে দূষিত করে এবং রোগজীবাণু ছড়ায়।
- কৃষি বর্জ্য: কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে নদী, পুকুর ও ভূগর্ভস্থ জলে মিশে জল দূষণ ঘটায়।
- তেল ছড়ানো: তেলবাহী জাহাজের দুর্ঘটনা বা তেল উত্তোলনের সময় তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়লে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
- তাপীয় দূষণ: শিল্প বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত উষ্ণ জল জলাশয়ে মিশে জলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর।
মাটি ও জল দূষণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, জীববৈচিত্র্য কমে যায় এবং মানব স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এদের দূষণ রোধ করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
বায়ু দূষণ
বায়ু দূষণ বলতে বায়ুমণ্ডলে এমন কোনো পদার্থের উপস্থিতি বোঝায় যা মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
বায়ু দূষণের কারণ:
- জীবাশ্ম জ্বালানির দহন: কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি দহনের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড ($\text{CO}_2$), সালফার ডাইঅক্সাইড ($\text{SO}_2$), নাইট্রোজেন অক্সাইড ($\text{NO}_{\text{x}}$) এবং কণা পদার্থ (Particulate Matter) নির্গত হয়, যা বায়ু দূষণের প্রধান কারণ।
- শিল্প-কারখানা: বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস, যেমন ক্লোরিন, ফ্লুওরিন, হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়।
- যানবাহন: মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, ট্রেন, বিমান ইত্যাদি থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস (যেমন কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড) বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস।
- বনভূমি ধ্বংস: গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন নির্গত করে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বায়ু দূষণে অবদান রাখে।
- কৃষি কাজ: কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক স্প্রে (যেমন কীটনাশক) এবং পশুর বর্জ্য থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস বায়ু দূষণ ঘটায়।
- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও দাবানল: প্রাকৃতিক কারণেও বায়ু দূষণ হতে পারে। আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড ও ছাই এবং দাবানলের ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে।
বায়ু দূষণের প্রভাব:
- শ্বাসনালীর রোগ: বায়ু দূষণের ফলে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসার এবং অন্যান্য শ্বাসনালীর রোগ বৃদ্ধি পায়।
- অ্যাসিড বৃষ্টি: সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়, যা গাছপালা, ভবন এবং জলাশয়ের ক্ষতি করে।
- গ্লোবাল ওয়ার্মিং: কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন গ্রিনহাউস প্রভাব বাড়ায়, যা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) ঘটায়।
- ওজোন স্তর ক্ষয়: ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs) এর মতো কিছু রাসায়নিক ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে দেয়।
- কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব: বায়ু দূষণ ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং ফলন কমায়।
বায়ু দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, গণপরিবহণের ব্যবহার, শিল্প বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বৃক্ষরোপণ অত্যাবশ্যক।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
আগের পাতার ছবিগুলো দেখে নীচের সারণিটি পূরণ করো:
মৌলের নাম | প্রোটন সংখ্যা | ইলেকট্রন সংখ্যা | নিউট্রন সংখ্যা | পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক | ভর সংখ্যা |
---|---|---|---|---|---|
কার্বন | |||||
সোডিয়াম | |||||
ক্লোরিন |
মৌলের পরমাণু থেকে এক বা একের বেশি ইলেকট্রন বেরিয়ে গেলে প্রোটন সংখ্যার থেকে ইলেকট্রন সংখ্যা কম হয়ে যায়। তখন ধনাত্মক (Positive) আধানযুক্ত আয়ন বা ক্যাটায়ন উৎপন্ন হয়। পরমাণু এক বা একের বেশি ইলেকট্রন নিয়ে নিলে কী হবে? তখন প্রোটন সংখ্যার থেকে ইলেকট্রন সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে এবং ঋণাত্মক (Negative) আধানযুক্ত আয়ন তৈরি হবে। একে অ্যানায়ন বলা হয়। সাধারণত ধাতু ও অধাতু জুড়ে যৌগ তৈরি হবার সময় ধাতুর পরমাণুগুলো ইলেকট্রন ছাড়ে আর অধাতুর পরমাণুগুলো ইলেকট্রন গ্রহণ করে। যেমন সোডিয়াম পরমাণু একটা ইলেকট্রন ছেড়ে দিলে যে ক্যাটায়ন তৈরি হবে তাকে Na⁺ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তেমনি ক্যালশিয়াম পরমাণু টি ইলেকট্রন ছেড়ে দিলে Ca²+ ক্যাটায়ন তৈরি করবে।
Na পরমাণু Na আয়ন
একটি ইলেকট্রন ছাড়লে
Cl পরমাণু Cl-আয়ন
একটি ইলেকট্রন নিলে
আবার ক্লোরিন পরমাণু একটা ইলেকট্রন নিয়ে নিলে যে অ্যানায়ন উৎপন্ন হবে তাকে Cl- দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একে ক্লোরাইড আয়ন বলে।
তোমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নীচের সারণি পূরণ করো। প্রয়োজনে শিক্ষক বা শিক্ষিকার সাহায্য নাও।
পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
আমরা জানি একাধিক মৌলের পরমাণু যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। কখনো কখনো একই মৌলের এক বা একাধিক পরমাণু অথবা বিভিন্ন মৌলের পরমাণু জোটবদ্ধ অবস্থায় আয়নরূপে অবস্থান করে; তখন সাধারণভাবে তাদের মূলক বলা হয়। জোটবদ্ধ অবস্থাতেই ওই মূলকগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। মূলকের আধানের পরিমাণই প্রাথমিকভাবে ওই মূলকের যোজ্যতা বলে ধরা যেতে পারে। পরে আমরা অন্য পদ্ধতিতে মূলকগুলোর যোজ্যতা কীভাবে নির্ণয় করা যায় তা জানব।
তোমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নীচের সারণি পূরণ করো।
মূলকের নাম | সংকেত | তার আধান বা চার্জ | যোজ্যতা |
---|---|---|---|
নাইট্রেট | $\text{NO}_3^-$ | -1 | 1 |
সালফেট | $\text{SO}_4^{2-}$ | ||
কার্বনেট | $\text{CO}_3^{2-}$ | ||
অ্যামোনিয়াম | $\text{NH}_4^+$ | +1 | 1 |
বাইকার্বনেট | $\text{HCO}_3^-$ | ||
ফসফেট | $\text{PO}_4^{3-}$ | ||
হাইড্রক্সাইড | OH- |
এবার আমরা অন্য পদ্ধতিতেও মূলকগুলোর যোজ্যতা কীভাবে জানা যায় তা দেখব। আমরা জানি যে দুটো মৌলের পরস্পর যুক্ত হবার ক্ষমতাকে ওই মৌলদের যোজন ক্ষমতা বলা হয়।
নীচের সারণিতে একক যোজ্যতাবিশিষ্ট ধাতু সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের সঙ্গেও বিভিন্ন মূলক যুক্ত হয়েছে এমন কয়েকটি যৌগের সংকেত ও তাদের মধ্যে উপস্থিত মূলকের সংকেত দেওয়া হলো। সংকেতে সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের পরমাণুর সংখ্যা থেকে মূলকগুলোর যোজ্যতা লেখো:
যৌগের সংকেত | তার মধ্যে উপস্থিত অ্যানায়নের নাম ও সংকেত | অ্যানায়নের যোজ্যতা |
---|---|---|
$\text{Na}_2\text{S}$ | সালফাইড ($\text{S}^{2-}$) | 2 |
$\text{NaHCO}_3$ | বাইকার্বনেট ($\text{HCO}_3^-$) | |
NaCN | সায়ানাইড ($\text{CN}^-$) | |
NaOH | হাইড্রক্সাইড (OH-) | |
NaF | ফ্লুওরাইড ($\text{F}^-$) | |
NaBr | ব্রোমাইড ($\text{Br}^-$) | |
$\text{NaNO}_2$ | নাইট্রাইট ($\text{NO}_2^-$) | |
$\text{Na}_2\text{SO}_3$ | সালফাইট ($\text{SO}_3^{2-}$) | |
$\text{KMnO}_4$ | পারম্যাঙ্গানেট ($\text{MnO}_4^-$) | |
$\text{K}_2\text{Cr}_2\text{O}_7$ | ডাইক্রোমেট ($\text{Cr}_2\text{O}_7^{2-}$) | |
$\text{NaAlO}_2$ | অ্যালুমিনেট ($\text{AlO}_2^-$) | |
$\text{Na}_2\text{ZnO}_2$ | জিঙ্কেট ($\text{ZnO}_2^{2-}$) | |
$\text{NaHSO}_4$ | বাইসালফেট ($\text{HSO}_4^-$) |
পরিবেশ ও বিজ্ঞান
ষষ্ঠ শ্রেণিতে হাইড্রোজেনের যোজ্যতাকে 1 ধরে হাইড্রোজেন যুক্ত বিভিন্ন যৌগ থেকে তোমরা জেনেছ যে অক্সিজেনের যোজ্যতা 2, ক্লোরিনের যোজ্যতা 1। এবার আমরা ক্লোরিনের বিভিন্ন যৌগ থেকে বিভিন্ন ধাতু ও অধাতুদের যোজ্যতা নির্ণয় করব। নীচের সারণিতে বিভিন্ন মৌলের সঙ্গে যুক্ত ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যাই হলো ওই মৌলের যোজ্যতা।
যৌগের নাম | সংকেত | যৌগে ক্লোরিন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত ধাতু |
যৌগে ধাতুর পরমাণু পিছু ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা |
ধাতুর যোজ্যতা |
---|---|---|---|---|
সোডিয়াম ক্লোরাইড | NaCl | Na | 1 | |
পটাশিয়াম ক্লোরাইড | KCI | K | 1 | |
ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{CaCl}_2$ | Ca | 2 | 2 |
ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড | $\text{MgCl}_2$ | Mg | 2 | |
ফেরাস ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_2$ | Fe | 2 | |
ফেরিক ক্লোরাইড | $\text{FeCl}_3$ | Fe | 3 | 3 |
অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড | $\text{AlCl}_3$ | Al | 3 | |
জিঙ্ক ক্লোরাইড | $\text{ZnCl}_2$ | Zn | 2 | |
কিউপ্রাস ক্লোরাইড | CuCl | Cu | 1 | |
কিউপ্রিক ক্লোরাইড | $\text{CuCl}_2$ | Cu | 2 | |
সিলভার ক্লোরাইড | AgCl | Ag | 1 | |
লেড ক্লোরাইড | $\text{PbCl}_2$ | Pb | 2 |
ওপরের সারণির যৌগগুলোর সংকেত লক্ষ করলে তোমরা দেখবে আয়রন, কপার প্রভৃতি মৌলের একাধিক যোজ্যতা রয়েছে। এইসব মৌলগুলো যোজ্যতা পরিবর্তন করে একই মৌলের বিভিন্ন সংখ্যক পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগ তৈরি করতে পারে। এইরকম যোজ্যতাকে মৌলের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বলে। সারণিটি ভালো করে লক্ষ করে দেখবে যে সব যৌগে মৌলের যোজ্যতা কম সেই যৌগে তাদের নামের শেষে 'আস' যুক্ত হয়েছে আর যে যৌগে ওই মৌলেরই যোজ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের নামের শেষে 'ইক' যুক্ত হয়েছে। যেমন ধরো ফেরাস ও ফেরিক যৌগে আয়রনের যোজ্যতা যথাক্রমে 2ও 3।
সংকেত লেখার কৌশল
বিভিন্ন মৌল কিংবা মূলকের যোজ্যতাকে ব্যবহার করে কীভাবে যৌগের সংকেত লেখা যায় তা দেখা যাক। ধরা যাক, A ও B দুটি মৌল বা মূলক যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। A মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা m এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা n হলে A এবং B দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে A মৌলের বা $\text{A}_n\text{B}_m$ মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (m)কে B মৌলের বা মূলকের ডানদিকে একটু নীচে এবং B মৌলের বা মূলকের যোজ্যতা যত সেই সংখ্যা (n)-কে A মৌলের বা মূলকের ডানদিকে লিখে প্রকাশ করলে সেটি হবে A ও B মৌল বা মূলক দ্বারা তৈরি যৌগের সংকেত।
4
পরিবেশ গঠনে পদার্থের ভূমিকা
মৌলিক পদার্থের ভূমিকা
আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ রয়েছে। এই পদার্থগুলো পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে মৌলিক পদার্থগুলি জীব ও জড় উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।
হাইড্রোজেন (Hydrogen):
- এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা মৌল।
- পৃথিবীতে এটি প্রধানত জলের (H2O) অণুতে পাওয়া যায়।
- জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যায়। হাইড্রোজেনকে পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব এবং এর দহনে পরিবেশ দূষণ হয় না, কারণ এটি শুধু জল তৈরি করে।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে জৈব যৌগ (যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট) গঠনে হাইড্রোজেন একটি অপরিহার্য উপাদান।
কার্বন (Carbon):
- কার্বন জীবজগতের মূল ভিত্তি। সমস্ত জৈব যৌগ কার্বন দিয়ে তৈরি।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ইত্যাদি কার্বন-ঘটিত যৌগ রূপে থাকে।
- কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস বায়ুমণ্ডলে থাকে এবং সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ এটি ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে।
- কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি কার্বন-ঘটিত।
অক্সিজেন (Oxygen):
- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় 21% অক্সিজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত।
- জীবজগতের শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য।
- জল (H2O) গঠনে অক্সিজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- দহন প্রক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন।
নাইট্রোজেন (Nitrogen):
- বায়ুমণ্ডলের প্রায় 78% নাইট্রোজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রোটিন গঠনে নাইট্রোজেন অপরিহার্য।
- মাটিতে নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে এটি উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য হয়।
এই মৌলিক পদার্থগুলো একে অপরের সাথে এবং অন্যান্য মৌলের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগিক পদার্থ তৈরি করে, যা আমাদের পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ।